‘সামনে বন্ড মার্কেট অনেক বড় হবে’

‘সামনে বন্ড মার্কেট অনেক বড় হবে’
সামনে বন্ড মার্কেট অনেক বড় হবে। এটি জনপ্রিয় হওয়ার আগ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে হবে। তা না পারলে ভালো কোন রিটার্ন আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত ‘বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বীমা ধারনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী, সালমা নাসরীন, বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মো. সাইফুর রহমান ও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমি খুবই খুশি যে ডিএসই আজ বীমা পণ্য নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে। আমাদের আইডিআরএ চেয়ারম্যান আগে থেকেই শেয়ারবাজারের সঙ্গে পরিচিত। যার জন্য তিনি ক্যাপিটাল মার্কেট বুঝেন। আমি উনার সঙ্গে কয়েক মাস আগে কথা বলেছি। তখন বন্ড জনপ্রিয় করার জন্য কিছু করছি না কেনো বললাম। এটি জনপ্রিয় করতে গিয়ে শুরুর দিকে ধাক্কা আসবে। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বন্ডের জন্য একটি বড় বাধা।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বিনিয়োগকারীদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু কিভাবে দেব? আমিতো জানি না কোন কোম্পানি কখন কি ঘটায় ফেলবে। কে যে আজ তদারকির পরে কালকে কি করবে, তাতো জানি না। আমরাতো সারাক্ষন কারও উপর চোখ বা ক্যামেরা লাগিয়ে বসে থাকতে পারি না। ঘটনাতো হঠাৎ ঘটে যায়। তখন কিভাবে বিনিয়োগকারীদেরকে সুরক্ষা দেব? এর সমাধান বীমা খাত।

তিনি আরও বলেন, বন্ডকে জনপ্রিয় করতে এবং বন্ড ক্রেতাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা আইডিআরএর সঙ্গে একটি প্রোডাক্ট ডিজাইন করেছি। এটা হয়তো সামনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান আলোচনা করে সবার সামনে নিয়ে আসবেন। এই বন্ডের ব্যবসা হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। এই বন্ডে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে পারলে আমরা জনপ্রিয় করতে পারব এবং বীমা কোম্পানিগুলোর কমিশন থেকে অনেক আয় করতে পারবে।

এছাড়াও তিনি বলেন, মানুষ কিন্তু ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১০ টাকা মুনাফা করতে গিয়ে ১ টাকার বীমা করতে অনাগ্রহ দেখাবে না। এটাকে তারা কিচ্ছু মনে করবে না। তারা মনে করে, বীমা করতে গিয়ে যদি ১০০ টাকা ফেরত নিশ্চিত হয় এবং ১০ টাকা লাভ হয়, তাহলে ১ টাকা দিতে রাজি আছি। এখন সেই জিনিসটাতো সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।

তাই বীমা ও শেয়ারবাজারের রেগুলেটরদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদেরকে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসতে হবে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের কি কাজ করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য যে শুধু রেগুলেটরদের কাজ করতে জবে, তা না। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনগুলো কাজ করতে পারে। সবাইকেই চিন্তা করতে হবে কিভাবে কাজ করলে শেয়ারবাজার ও বীমা খাত লাভবান হয়।

তিনি বলেন, যখন শেয়ারবাজার ও বীমা খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার টার্নওভার করবে, তখন সরকারের রাজস্ব বাড়বে। এতে করে দেশের অর্থনীতি বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান বাড়বে। অতএব আমাদেরকে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এখানে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারন বীমায় থাকাকালীন ক্যান্সার ও কিডনী রোগের বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করি। এই দুইটা অসুখ যে পরিবারে হয়, সেই পরিবারটা পুরো ধংস হয় যায়। যদি তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হয়। কিডনী ডায়ালাইসিস করার শেষ নাই। আর ক্যান্সারের চিকিৎসার যে কি পরিমাণ ব্যয়, সেটাতো সবাই জানেন। এই পরিস্থিতিতে সাধারন বীমায় থাকাকালীন সমাধান খোজার জন্য চিন্তা করেছিলাম এবং সহজ সমাধানের জন্য চেষ্টা করছিলাম।

এ বিষয়ে ওইসময় রবি আজিয়াটার ও গ্রামীনফোনের সিইওর সঙ্গে বসেছিলেন বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ওইসময় কোম্পানি দুটির গ্রাহক ছিল ১০ কোটির মতো। যা এখন আরও অনেক বেশি। তা হিসাব করে দেখলাম, যদি ওই গ্রাহকরা মাসে যদি ২০ টাকা করে বীমা করে, তাহলে জমা হয় ২০০ কোটি টাকা। যা বছরে হয় ২৪০০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এই টাকা নিয়ে আমরা গবেষণা করেছিলাম। দেখলাম বছরে ৮৮-৯০ হাজার কিডনী রোগী ও ১ লাখ ক্যান্সার রোগী হয়। তাদের যে খরচ, তা ওই ২০ টাকার বিনিময়ে গ্রাহক পেয়ে যাবে। একইসঙ্গে বীমা কোম্পানিগুলো ২৪০০ কোটি টাকা পাবে। যেখানে ৯০ হাজার কিডনী রোগী ও ১ লাখ ক্যান্সার রোগীর পেছনে বাৎসরিক ব্যয় ৬০০-৮০০ কোটি ব্যয় হয়। তার মানে বীমা কোম্পানিগুলোর এখান থেকে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা মুনাফা হবে। এতে করে মারাত্মক রোগ দুটির ব্যয় থেকে পরিবারগুলো বাঁচবে এবং বীমা কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারনে এ কাজটি শেষ করতে পারিনি।

বীমা খাতের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, কেউ একটি নির্দিষ্ট সীমার বাহিরে যেতে চাচ্ছি না। সবাই একই চিন্তা-ভাবনা, একই সীমানা, একই গন্ডি ও নিয়মনীতির মধ্যে থাকতে চায়। কিন্তু এর বাহিরে যে কত সুযোগ রয়েছে, সেটা কেউ নেওয়ার চেষ্টা করে না। এই কারনে সম্পদের কাড়াকাড়ি ও মার্কেটটাকে ছোট করে রাখছি। যাতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে না এবং নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ক্ষতি এসে যায়। এছাড়া লাভ কম হয়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব সম্পদ বা পণ্য সামনে এসে সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেই সুযোগ আমরা নিতে পারি নাই। ধরেন এসএমই কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানিগুলোতে মাল দিতে পারে না। কারন বড় বড় কোম্পানিগুলো বাকিতে মাল চায়। তারা ৩০-৯০ দিন পরে বিল দিতে চায়। কিন্তু এসএমই কোম্পানিগুলোর পক্ষে এই বাকিতে পণ্য দেওয়ার সুযোগ কি আছে। থাকলেও তাদেরকে বাকির টাকা আদায় হওয়া পর্যন্ত পূণঃরায় উৎপাদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এখানে যদি পেমেন্টটা বা চেকটা বীমা করে দিতাম, সে হয়তো ১ টাকা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম দিয়ে দিত। এখানে লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা বীমা কাভারেজ দিয়ে একদিকে বীমা কোম্পানির আয় বাড়ানো যায়, অন্যদিকে এসএমই কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ২-৫ গুণ বাড়াতে সাহায্য করা যায়। কিন্তু আমরা করছি না।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত