লভ্যাংশ না দেওয়ায় মুন্নু ফেব্রিক্সসহ ২০ কোম্পানিকে তলব

লভ্যাংশ না দেওয়ায় মুন্নু ফেব্রিক্সসহ ২০ কোম্পানিকে তলব
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এর মধ্যে মুন্নু ফেব্রেক্সি, অরামিট সিমেন্ট, ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড ও জেনারেশন নেক্সট চলতি বছরে আয় করেও কোন লভ্যাংশ দেয়নি। তালিকাভুক্ত ২০ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার এ তালিকায় রয়েছে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) থেকে মূল বাজারে ফেরত আসা মুন্নু ফেব্রিক্স। এসব কোম্পানিগুলোকে তলব করবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে এর পূর্বে কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে প্রথম বছরেই বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়া ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বিএসইসি। বহুজাতিক কোম্পানিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে তলব করে কমিশন। যার ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে কোম্পানিগুলো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে লভ্যাংশ দেয় বিনিয়োগকারীদের।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ অর্থসংবাদকে বলেন, যেসব কোম্পানি মুনাফা করা সত্তেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি সেসব কোম্পানিগুলো বিএসইসির নজরে রয়েছে। খুব শীগ্রই তাদেরকে তলব করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন খুব শীগ্রই এসব কোম্পানিগুলোকে ডাকবে। এছাড়া ওটিসি ফেরত কোম্পানিগুলো শর্ত পূরণ না করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোপূর্বে আমাদের রেকর্ড রয়েছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকেও আমরা তলব করেছিলাম এবং তার ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় আমরা সর্বদা প্রস্তত।

এদিকে লভ্যাংশ না দেওয়া ২০টি কোম্পানি হলো- উসমানিয়া গ্লাস, ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড, জেনারেশন নেক্সট, কেপিপিএল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, দুলামিয়া কটন, আর এন স্পিনিং, রেনউইক যগেশ্বর, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, স্টাইলক্রাফট, সাভার রিফ্রাকটরিজ, মুন্নু ফেব্রিক্স, জাহিন টেক্স, ফাইন ফুড, খান ব্রাদার্স, ইয়াকিন পলিমার, অলটেক্ম ইন্ডাস্ট্রিজ, আইএসএন এবং আরামিট সিমেন্ট।

এদিকে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো মুনাফা করতে পারলেও এবারও বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অরামিট সিমেন্ট। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি। লভ্যাংশ না পেলেও শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা আয় করতে পারাটাই এই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পেতে পারেন।

এছাড়া চলতি বছরে আয় করেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ওয়াইম্যাক্স ইলেক্ট্রোড। প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি আয় করেছে ৮ পয়সা। গত বছর আয় ছিল ৫১ পয়সা। সে বছর লভ্যাংশ ছিল ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। এদিকে চলতি বছরে আয় করেও লভ্যাংশ দেয়নি জেনারেশন নেক্সট।

অপরদিকে ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের লভ্যাংশ দেয়ার ইতিহাস নেই। প্রায় প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান দেয়া কোম্পানিটি এবারও শেয়ারপ্রতি ৮ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছরে লোকসান ছিল ৭ টাকা ৬৭ পয়সা। একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজও এক দশকে মুনাফার মুখ দেখেনি।

এদিকে লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে টানা তৃতীয় বছর বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ না দেয়ার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাহিন টেক্স। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি ৩ টাকা ১ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর লোকসান ছিল ৩ টাকা ৭৭ পয়সা। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে শেয়ার প্রতি ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানি ফাইন ফুড এবার লোকসানে যাওয়ার পর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি ১১ টাকা ৩ পয়সা লোকসান দিয়েছে। আগের বছর মুনাফা ছিল ১৮ পয়সা। অপরদিকে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপস মুনাফা থেকে লোকসানে পড়ে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৮২ পয়সা৷ গত বছর শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ২৬ পয়সা। আগের বছর লোকসানে থাকার পরও নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা বিবিধ খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স এবারও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল ৯ পয়সা। ওই বছর ২ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশ পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া মুনাফা থেকে লোকসানিতে পরিণত হওয়া কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার এবার লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানিটি গত বছরের জুলাই থেকে চলতি জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৫৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ পয়সা। একইভাবে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে অলটেক্ম ইন্ডাস্ট্রিজ। লোকসানি এই কোম্পানিটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ৫ টাকা ৮ পয়সা লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ১০ টাকা ৩১ পয়সা। এদিকে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে আইএসএন। এই কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পর লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি কোম্পানিটি লোকসান দিয়েছে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১৮ পয়সা।

এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ওভার দ্য কাউন্টারের (ওটিসি) চার কোম্পানিকে মূল মার্কেটে লেনদেনের অনুমতি দেয়। ব্যবসায় উন্নতির কারণে ওটিসি মার্কেটের এসব কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল মার্কেটে লেনদেনের সম্মতি দেওয়া হয়েছিলো।

সেই সময় মূল মার্কেটে লেনদেনের সম্মতি পাওয়া ওটিসির চার কোম্পানিগুলো হলো: তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেড।

ওটিসি ফেরত এই চার কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে মুন্নু ফেব্রিক্স। ওটিসি থেকে ফেরার পর শেয়ার নিয়ে টানা-হেছড়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে। এক পর্যায়ে জুন মাসের ৩০ তারিখ সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা উঠে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর। এর পর আবার কমতে শুরু করে। ২৮ অক্টোবর এটির লেনদেন হয় ২৫ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ১১ পয়সা। তবে কোম্পানিটির পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত