করোনার আঘাতে পোশাক খাতের রপ্তানি কমেছে ৮৩ শতাংশ

করোনার আঘাতে পোশাক খাতের রপ্তানি কমেছে ৮৩ শতাংশ
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানি কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি রূপ নেওয়ায় লকডাউনে বন্ধ রয়েছে ব্যবসা। একের পর এক বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয়াদেশ। এর ফলে ব্যাপক হারে কমছে পোশাক রফতানি।

চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনে রফতানি হয়েছিল ১১৯ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পোশাক। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে এসব তথ্য দেখা গেছে।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, আগের মাস মার্চেও রফতানিতে বড় ধাক্কা খায় পোশাক খাত। গত মার্চে ১৯৭ কোটি ২২ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা গত বছরের মার্চের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭০ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের মার্চে ২৬৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমকি ৭৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের বাকি মাসেও রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এছাড়া একক মাস হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে সার্বিক রফতানি আয় হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে আয় ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমা মানে এর প্রভাব পুরো রফতানি খাতে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। একই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এদিকে পোশাক খাতের এ ভয়াবহ সংকটের মধ্যে প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয় আদেশ। সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ১৪০টি কারখানার ৯৭ কোটি ৯০ লাখ পোশাক পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৩ দশমকি ১৬ বিলিয়ন বা ৩১৬ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৮৬০ কোটি টাক (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, প্রতি মুহূর্তে ক্রেতারা ক্রয় আদেশ স্থগিত করছেন, বলছেন স্থগিত। তবে আমাদের জন্য এটি স্থগিত নয় বাতিল। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক খাত ভয়াবহ সংকটে আছে। একের পর এক অর্ডার বাতিল। শুধু তাই নয়, আগের পণ্যও ক্রেতারা নিচ্ছেন না। যাও কিছু নিচ্ছে তার বিল ঠিকমত পরিশোধ করছেন না।

আমাদের রফতানি নেই বললেই চলে। এখন অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ। আগামীতে কী হবে বলা যাচ্ছে না। এটা আমাদের একার সমস্যা নয়, বিশ্বব্যাপী সংকট। এখন আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়। পাশাপাশি কীভাবে অর্ডার বাতিল ও স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যায়, তার ওপর জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে রফতানি আদেশ বাতিল ও শিপমেন্ট না হওয়ায় নানামুখী সংকটের কারণে দেশের সব চেয়ে বড় শ্রমঘন এ শিল্পখাতে শ্রমিকদের বেতন প্রদানে জটিলতায় পড়েছে কারখানার মালিকরা। বিষয়টি বিবেচনায় করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্যাকেজ থেকে বিনা সুদে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারবে উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
করোনার প্রভাবে বিশ্বে মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই বিশ্বের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।

এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে হাসপাতালগুলোতে এখন পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) সবচেয়ে বেশি জরুরি। তাই দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করতে চায় বিজিএমইএ। এজন্য আগামী ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে রফতানি যোগ্য বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদন পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পোশাকখাতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কমে গেছে চাহিদা
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ
২০২৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ১০ শতাংশ
ইভ্যালিতে বড় অফার আজ, ১০ টাকায় মিলবে পাঞ্জাবি
হিলিতে আদা-সবজিতে স্বস্তি, বাড়তি দামে রসুন
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঐক্যমতে শেষ হলো গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স
১১ মাসে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি
২০২৪ সালে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর
আইসিএবির নতুন সভাপতি ফোরকান উদ্দীণ
বিসিক শিল্পনগরীতে এক হাজার ৯৮ প্লট খালি