গত ২৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসসি। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষণা করা হয় নগদ ১২ শতাংশ লভ্যাংশ। এরপর মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে এ শেয়ারের দাম বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি। গত ২ জানুয়ারি কোম্পানিটির দর কমেছিল ০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। লভ্যাংশ ঘোষণার পর ৯দিনই কোম্পানিটির শেয়ার যতটুকু বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব ততটুকু বেড়েছিল। আর ১২ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভালো লভ্যাংশের খবরে একটি শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে ১০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়াকে কোনভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না। তাদের মতে আর্থিক প্রতিবেদনে মুনাফা বৃদ্ধির তথ্য এবং লভ্যাংশ ঘোষণাকে পুঁজি করে একটি চক্র বিএসসির শেয়ারে কারসাজি করছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের আয় বাড়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কোনো চক্র শেয়ার দাম বাড়াচ্ছে কি না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, কোন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হলে বিএসইসি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, বিএসসির প্রথম প্রান্তিকের আয়কে অনেক বিনিয়োগকারী বার্ষিক আয় মনে করেছে। আবার অনেকে সোশ্যাল প্লাটফর্মে শেয়ার নিয়ে বিভিন্ন কথা লিখছে। এসব কারণে শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। যদি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হয়ে থাকে তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মানুষের চাহিদা পরিবর্তন হয়। কখনো টেক্সটাইল, কখনো ইন্স্যুরেন্স, আবার কখনো ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ করে। গত কয়েকদিন সরকারি শেয়ারগুলো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
কোন শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখকর নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী। অর্থসংবাদকে তিনি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর বেড়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন বাজার আমরা চাই না। শেয়ারের দাম স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাবে এমনটাই চাই আমরা।
সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানায়, ২০২১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএসের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৬৪৮ শতাংশ।
এর আগে, ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। তার আগে ২০১৯ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬ শতাংশ এবং ২০১৭ সাল ও ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৬ সালে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা।
বিএসইর মোট শেয়ার সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪০টি। প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৫২ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ হিসেবে, প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের চার ভাগের এক ভাগেরও কম রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।