এদিকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ মানুষের মধ্যে ‘করোনাভাইরাস ডিজিস ২০১৯’ (কভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে এক লাখ মারা গেছে গত ১৫ দিনে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু ঘটেছে ইউরোপ-আমেরিকায়।
প্রায় ছয় সপ্তাহ পর গতকাল প্রথমবারের মতো ঘরের বাইরে যাওয়ার স্বাদ পায় স্পেনের শিশুরা। এ ছাড়া দেশটিতে কিছু কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তবে অনেকেই লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবিতে শনিবার বার্লিনে বিক্ষোভ মিছিলও হয়েছে। গত মঙ্গলবার লকডাউন প্রত্যাহারের রূপরেখা প্রকাশ করে ফ্রান্স সরকার। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে লকডাউনে আছে ইতালির মানুষ। সেখানে গতকাল রবিবার লকডাউন শিথিলের ঘোষণা আসার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসের শুরু থেকে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা আসতে পারে। মক্কা ছাড়া অন্যান্য শহরের কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
সর্বোচ্চ আক্রান্তের তালিকায় থাকা ইরানেও অনেক কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সেখানে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে। এদিকে লকডাউন শিথিলের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। উল্টো সেখানে লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার এক দিনে রাজধানী কলম্বোতে ৮১ জনের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
‘ইমিউন পাসপোর্ট’ নিয়ে সতর্কতা : অনেকেই আছে, যারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছে, কিন্তু কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এমন ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। একবার অ্যান্টিবডি তৈরি হলে সাধারণত দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে না। এ জন্য লকডাউন শিথিল করার ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টিবডি’ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে অনেক দেশ। এই পরীক্ষায় যারা ‘পাস’ করবে তাদের ‘ইমিউন পাসপোর্ট’ দিয়ে কাজে ফেরার সুযোগ দিতে চায় দেশগুলো। তবে এ ধরনের ‘পাসপোর্টের’ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ডাব্লিউএইচও। জাতিসংঘের এই সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সেরে উঠার পর কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হননি—এখন পর্যন্ত এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। শনিবারের ৮১৩ জনসহ দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩১৯ জনে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, করোনা জয় করে আজ সোমবার থেকে কাজে ফিরছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্পেনে দৈনিক মৃতের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। গত শনিবার দেশটিতে ৩৭৮ জনের মৃত্যু হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ১১ জন বেশি। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৫৯ এবং ২২ হাজার ৯০২ জনে।
ইতালিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা স্থিতিশীল আছে। কমছে দৈনিক মৃত্যুর হার। গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে গত শনিবার দেশটিতে সবচেয়ে কম মানুষের (৪১৫ জন) মৃত্যু হয়। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি। মৃত্যু ২৭ হাজার ছুঁই ছুঁই।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১১ জন। তবে টানা ১০ দিন ধরে দেশটিতে করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১০ জন। গতকালের ৬০ জনসহ ইরানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭১০ জনে। পাশের দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮২৫ জনের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে তুরস্কে; এক লাখ সাত হাজার ৭৭৩ জন। মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৭০৬ জনের।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো ‘হটস্পট’ হিসেবেই রয়ে গেছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে আক্রান্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক। সেখানকার অনেক ফার্মেসিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো বলেন, ‘এই অঙ্গরাজ্যের পাঁচ হাজার ফার্মেসি করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করতে পারবে। এর ফলে প্রতিদিন ৪০ হাজার পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।’
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৫২৮ জনের। সুস্থ হয়েছে আট লাখ ৬৭ হাজার ৭০৭ জন। চিকিৎসাধীন আছে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৪ জন। এদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ রয়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৮ জনের (৯৭ শতাংশ)। বাকি ৫৭ হাজার ৫৯৬ জনের (৩ শতাংশ) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বিশ্বের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে কভিডে আক্রান্ত হয়েছে ৩৭৭ জন। বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ৬.৯৩ শতাংশ। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।