জালিয়াতির মাধ্যমে একটি বেসরকারি ব্যাংকের দুই শতাধিক এটিএম বুথ মেশিন থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত সেই চক্রটির মূলহোতাসহ ৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবমিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গরমিল পরিলক্ষিত হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি পরিবর্তন করে। তারপরও অনিয়ম ও গড়মিল পরিলক্ষিত হতে থাকে।
পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি বিষয়টি নিয়ে র্যাবের শরণাপন্ন হন। র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে।
ছায়াতদন্তের একপর্যায়ে র্যাব উদঘাটন করে থার্ড পার্টি পরিবর্তন হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কোননো পরিবর্তন হয়নি। র্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে।
শনিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন-মানিকগঞ্জের আব্দুর রহমান বিশ্বাস, যশোরে তারেক আজিজ, গাজীপুরের শ্রীপুরের তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান ,বরিশালের এয়ারপোর্টের রবিউল হাসান, গাজীপুরের কাপাসিয়ার হাবিবুর রহমান ইলিয়াস, ঝিনাইদগহ জেলায় মহেশপুরের কামরুল হাসান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের সুজন মিয়া, সাতক্ষীরার দেবহাটার আব্দুল কাদের।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় ২টি চেকবই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডি কার্ড, ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ১ জোড়া বালা, ১ জোড়া কানের দোল, ১টি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ হতে টাকা আত্মসাতের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। তারা জানায়, গত ২-৩ বছর ধরে চাকরি করার সুবাদে পারস্পরিকভাবে পরিচিত হয়।
একপর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে।
আব্দুর রহমান বর্ণিত সিন্ডিকেটের মূলহোতা। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যান্যরা তার সহযোগী; যারা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
তারা সবাই ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করে থাকে।
এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে; যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে থাকে। এছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরিসংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকত।
মঈন জানান, অপরাধীরা লোডিং ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। কোনো ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ঐ পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্স বিনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিত। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করত।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আব্দুর রহমান ৩-৪ বছর আগে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরি নেন। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশী, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। সে প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
র্যাব জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।