বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ আগামী ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচলিত নীতিমালার আওতায় আসবে না। ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দিলেও এর বিপরীতে কোনো প্রভিশন রাখতে হবে না। ফলে তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপ কমবে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা বাড়বে।
এর আগে ২০২০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ নীতিমালা আংশিক শিথিল করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে প্রতিটি ব্যাংক প্রচলিত নীতিমালার বাইরে গিয়ে পুঁজিবাজারে আরও অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করার সুযোগ লাভ করে। এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ আগামী ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচলিত নীতিমালার আওতায় আসবে না।
ওই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে একটি নীতিমালাও ঘোষণা করেছেলি বাংলাদেশ ব্যাংক।কিন্তু গত দুই বছরেও এই নীতিমালা মেনে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেনি।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এর বেশি তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে না। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, রিজার্ভ তহবিলে থাকা অবণ্টিত মুনাফা, প্রিমিয়াম আয় ও রিটার্ন আয়-এই চারটি উপাদান মিলে হচ্ছে রেগুলেটরি মূলধন।
দেশে বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংক ব্যবসা করছে। এরা প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করলে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করতে পারবে। তবে পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের হিসেবটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএসইসি। এই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার সক্ষমতা হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে কোনো কার্যদিবসে ২০০ কোটি টাকার সীমার যে কোনো পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তুলতে পারবে। এর সুদের হার হবে ৫ শতাংশ। সাধারণত ট্রেজারি বিল বা ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে নিলাম করে টাকা তুলতে হয়। এক্ষেত্রে কোনো নিলামের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য হতে এ সুবিধা নিতে পারবে।
বিনিয়োগে ঝুঁকি কমানোর জন্য এ তহবিলের মধ্যে ১০ শতাংশ অর্থ মেয়াদি বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। একইসঙ্গে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে এ তহবিলের ১০ শতাংশ অর্থ বিশেষ পারপাস ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে।
২০০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিও উন্নয়নে ৪০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পোর্টফোলিওর উন্নয়নের ২০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করা যাবে। অন্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার জন্য ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকার হাউসের উন্নয়নে ১০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গ্যারান্টিতে এই ঋণ দেওয়া যাবে।
এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজ ব্যাংকের শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে তাদের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি কেনা যাবে না। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে মেয়াদি ১০ শতাংশ ও মেয়াদবিহীন ফান্ডে ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।
যেসব কোম্পানি গত ৩ বছরে ১০ শতাংশ করে বোনাস বা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কেবল ওইসব কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে। যেসব মিউচুয়াল ফান্ড বিগত ৩ বছর ধরে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ওইসব শেয়ার কেনা যাবে।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভের মুখে সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আওতায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। দুই বছর পর আবারো দরপতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে শেয়ারবাজার। সেখান থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে আজ বুধবার ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ফান্ডের অগ্রগতি জানতে বৈঠকের আয়োজন করেছে বিএসইসি।