‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি, ২০১৯: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে বেসরকারি খাতের অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী শ্রমিকেরা ১৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৯ সালে প্রবাসী আয় হবে ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। তবে কর্মী পাঠানোর হার কমে এসেছে। বছর শেষে কর্মী পাঠানোর হার গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ কর্মী বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো প্রায় বন্ধ থাকায় মূলত এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৮৮ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। অথচ ২০১৮ সালে পৌনে ২ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। এ বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সৌদি আরবে।
রামরু বলছে, নারী কর্মীদের নিগ্রহের ঘটনা থাকলেও বিদেশে নারী কর্মী যাওয়ার হার কমেনি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৪৩০ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। ডিসেম্বর মাসেও নারী কর্মী যাওয়ার এই গতি অব্যাহত থাকলে তা ২০১৮ সালের তুলনায় ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়তে পারে। বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ পর্যালোচনা ও বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই বছর এখন পর্যন্ত ৩ হাজারের মতো নারী কর্মী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ১ শতাংশ পেশাজীবী বিদেশে গেছেন। এ ছাড়া ৪৪ শতাংশ দক্ষ, ১৪ শতাংশ আধা দক্ষ এবং ৪১ শতাংশ স্বল্প দক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশে গেছেন।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক কূটনৈতিক প্রস্তুতি প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে সৌদি আরবে নারী শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও সুশীল সমাজ উভয়কেই আরও তৎপর হওয়াসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন ‘আমরা দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে পারছি না। শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষ জনবল তৈরি করছে না।’ ভারতের এনআরসি ও সিএএ বাংলাদেশে প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।