অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের অধীনে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে যে গবেষণা চলছে, সেই দলে রয়েছেন সুমি। আর চন্দ্রা কাজ করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটির কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স ম্যানেজার হিসেবে। এই ফেসিলিটি থেকেই তৈরি হয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক চ্যাডক্স১। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে মানবশরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে প্রতিষেধকটির। ইতিমধ্যেই যথেষ্ট আশা জাগিয়েছে তা। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিষেধকটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৮০ শতাংশ।
সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে ১৫ জন বিজ্ঞানীর দলে রয়েছেন সুমি। পেশায় ইমিউনোলজিস্ট সুমি বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ইংল্যান্ড চলে যান। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনে বছরখানেক কাজ করার পরে যোগ দেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। এরপর ২০১৩ সালে জেনার ইনস্টিটিউটে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু করেন সুমি। এই মুহূর্তে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে জেনার ইনস্টিটিউটের গবেষণাদলের শীর্ষেও রয়েছেন এই বাঙালি মেয়ে। এ ছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অন্তর্গত গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পাইবায়োটেকের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হিসেবেও কর্মরত ইমিউনোলজিস্ট সুমি।
আসা যাক অপর বাঙালি মেয়ে চন্দ্রা ওরফে চন্দ্রাবলীর কথায়। টালিগঞ্জের গলফ গার্ডেনের মেয়ে চন্দ্রা ছিলেন গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্রী। হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে বিটেক করার পর ২০০৯ সালে ব্রিটেনে চলে যান চন্দ্রা। লিডস ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োসায়েন্সে (বায়োটেকনোলজি) এম এসসি করেন। তারপর একাধিক দায়িত্বশীল পদে কাজ করেছেন তিনি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং ফেসিলিটিতে যোগ দেওয়ার পর ভ্যাকসিন তৈরির গুণগত মানের দিকটি নজরে রাখেন চন্দ্রা। যথাযথ পদ্ধতি এবং নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে কিনা, সব কিছু ঠিকমতো করা হয়েছে কিনা, অর্থাৎ কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্সের বিষয়টি সুনিশ্চিত করাই চন্দ্রার দায়িত্ব।
এই মুহূর্তে বাড়ি থেকেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীদের দল। চন্দ্রা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে করোনা প্রতিষেধকের প্রথম পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর জুম অ্যাপের মাধ্যমেই কেক কেটে, ওয়াইনের বোতল খুলে উদযাপন করা হয়েছে দিনটি। সংবাদমাধ্যমকে চন্দ্রা বলেছেন, "আমাদের জীবনের লক্ষ্যই হল মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ, আরও উন্নত করে তোলা। গত একমাসে আমাদের সকলের উপরেই প্রচণ্ড চাপ ছিল, কিন্তু সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে খুব তাড়াতাড়ি আমরা ভ্যাকসিনটি তৈরি করতে পেরেছি। গোটা দুনিয়া এই ভ্যাকসিনের সাফল্য কামনা করছে, একমাত্র তা হলেই জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।"
কতদিনে সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে এই ভ্যাকসিন? সংবাদমাধ্যমকে চন্দ্রা বলেছেন, "যতদূর জানা আছে, ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে, যাতে ট্রায়াল শেষ হয়ে গেলেই তা বাজারে পৌঁছে যেতে পারে।"
স্বাভাবিকতা ফেরার অপেক্ষায় আপাতত সুমি আর চন্দ্রার সাফল্যের অপেক্ষাতেই দিন গুনছে তামাম পৃথিবী!