হুরুনের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২১ সালে ভারতে ১০ লাখ ডলারের মালিকের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৫৮ লাখ। মুম্বাইয়ে এমন পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—২০ হাজার ৩০০। দিল্লি ও কলকাতায় তা যথাক্রমে ১৭ হাজার ৪০০ ও ১০ হাজার ৫০০। ২০২৬ সালে এমন বিত্তশালীর সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬ লাখে পৌঁছাতে পারে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৫০ জনের মধ্যে ৬৬ শতাংশ বলেছে, তারা ব্যক্তিগত ও পেশাদারি জীবনে খুশি; কিন্তু ২০২০ সালে এই হার ছিল ৭২ শতাংশ।
এ ছাড়া ‘অক্সফাম ইন্ডিয়া’র সমীক্ষা অনুসারে, গত পৌনে ২ বছরে ভারতে ১০০ কোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এমন ১৪২ জনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৩ লাখ কোটি রুপি। দেশের ধনীতম ১০ শতাংশের হাতে জাতীয় সম্পদের ৪৫ শতাংশ রয়েছে। অথচ আয়ের নিরিখে নিচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। প্রায় একই সুরে মুম্বাইয়ের সংস্থা ‘প্রাইস’ (পিপলস রিসার্চ অন ইন্ডিয়াস কনজ্যুমার ইকোনমি) তাদের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানিয়েছে, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের আয় ২০২০-২১ সালে (অতিমারির বছরে) ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় ৫৩ শতাংশ কমেছে। ১৯৯৫ থেকে এই অংশের মানুষের আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। উল্টো দিকে, ধনীতম ২০ শতাংশ মানুষের আয় কোভিডের বছরেও ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
এমন মানুষদের জীবনযাপন কেমন? সমীক্ষা বলছে, তাঁদের চারজনের মধ্যে একজন প্রতি তিন বছরে গাড়ি বদলান। প্রথম পছন্দ মার্সিডিজ বেঞ্জ। শখের তালিকায় সবার আগে ঘড়ি সংগ্রহ। এর মধ্যে এগিয়ে আছে রোলেক্স ব্র্যান্ড, হোটেলের ক্ষেত্রে তাজ।
এদিকে ভারতের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে ই-ওয়ালেটের ব্যবহার বাড়ছে। হুরুন ইন্ডিয়া লাক্সারি কনজ্যুমার সার্ভে অনুসারে, ২০২১ সালের ভারতের ১০ লাখ ডলারের মালিকের মধ্যে ৩৬ শতাংশ অর্থ প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ই-ওয়ালেট ও ইউপিআই ব্যবহার করছে, গত বছর যা ছিল ১৮ শতাংশ।
তবে ভারতের এই উচ্চ আয়ের মানুষেরা খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না। মহামারির সময় কোন খাতে ঝুঁকি কম, সেই হিসাব তাঁরা করেছেন খুব ভালোভাবে। তবে সামগ্রিকভাবে আবাসন ও শেয়ারবাজার তাঁদের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় জায়গা।
এ প্রসঙ্গে হুরুন ইন্ডিয়ার এমডি আনাস রহমানের বক্তব্য, আগামী এক দশকে এদেশে দামি ও বিলাসদ্রব্যের ব্র্যান্ডের ব্যবসা বিস্তারের সুযোগ বাড়াবে এই প্রবণতা। এদিকে আর্থসামাজিক বৈষম্য কমাতে ধনীদের ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে দাবি উঠছে বিভিন্ন মঞ্চে। হুরুনের সমীক্ষায় অবশ্য মাত্র ১৯ শতাংশ বিত্তশালী সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত পোষণ করেন।
কোভিড রুখতে যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয় বিশ্বজুড়ে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে তার বড় প্রভাব পড়েছে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক জীব। ফলে চলাচল ব্যাহত হলে সবাই বিষণ্ন বোধ করেন। এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিব সবাই সমান।
দেখা গেছে, যেসব দেশের মানুষ সামাজিক সম্পর্কের কারণে সুখী, তারা গত বছর বা এই মহামারিকালে সুখী দেশের তালিকায় পিছিয়েছে। আর যেসব দেশের মানুষের সুখের মূল কারণ অন্যের ওপর আস্থা, তারা এই তালিকায় এগিয়েছে। ভারত, লাতিন অঞ্চল ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোয় সামাজিক মেলামেশা ও সম্পর্ককেই সুখের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। আর কোভিডকালে এই বিষয় সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে। ফলে তারা সুখী দেশের তালিকায় পিছিয়েছে। অন্যদিকে চীন, জাপান বা নরডিক রাষ্ট্রগুলোয় থাকা মানুষের সুখের মূল ভিত্তি আইন ও প্রশাসনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস। এই দুর্যোগে এ বিষয়গুলোকে তারা সক্রিয় হতে দেখেছে। ফলে তারা আগের তুলনায় সুখী হয়েছে বেশি।