ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায়

ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায়
সিঙ্গাপুরে একটি রাশিয়ান সুপার মার্কেটের মালিক জিয়া রুইয়িং। পূর্ব ইউরোপ থেকে খাবার ও পানীয় এনে সিঙ্গাপুরে বিক্রি করেন তিনি। করোনা মহামারির কারণে তাঁর ব্যবসা আগে থেকেই ধুঁকছিল। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। তিনি জানান, রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে দেশটি থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

জিয়া রুইয়িং বিবিসিকে জানান, সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত রুশ, ইউক্রেনীয় ও বেলারুশের মানুষজন সংকটের বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই যুদ্ধ শুরুর আগে–পরে তাঁরা দোকানে এসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনে নিয়ে গেছেন।

এতে মজুত পণ্য দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। পূর্ব ইউরোপ থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় এখন ক্রেতাদের চাহিদা মেনে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প উৎস থেকে পণ্য আনার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে রয়েছে আরেকটি সংকট। ইউক্রেনে হামলা শুরুর জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনকারী ব্যবস্থা সুইফটে কয়েকটি রুশ ব্যাংকের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে পূর্ব ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানিতে সমস্যায় পড়ছেন আমদানিকারকেরা।

শুধু সিঙ্গাপুর নয়, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি সবে করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে শুরু করেছিল। মহামারির আগে নাইকি, এডিডাস, পুমার মতো বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ডগুলো উৎপাদন খরচ কমাতে চীন ছেড়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় কারখানা সরিয়ে এনেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে বিভিন্ন কোম্পানি কারখানা সরিয়ে আনায় ২০১৯ সালে ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো রেকর্ড ১৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের বেশির ভাগ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আমদানি করে। তাই ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর রুশ জ্বালানি খাতের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তারা হয়তো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

কিন্তু রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় পেট্রোলের দাম বেড়ে গিয়েছে। বেড়েছে পণ্য পরিবহন ও আমদানির খরচ।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশ্লেষক বন্দনা হরি বিবিসিকে বলেন, যেখান থেকেই জ্বালানি তেল কিনুন না কেন, আপনাকে ১০ বছরের সর্বোচ্চ দাম পরিশোধ করতে হবে। সব দেশের জন্যই এটা এখন চ্যালেঞ্জ।

সিঙ্গাপুরে আবাসন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন জাস্টিন কুয়েক। প্রতিদিন প্রায় ৮০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে ক্রেতাদের নিয়ে ঘুরেতে হয় তাঁকে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর মাসিক জ্বালানি ব্যয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে তিনি ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহারের কথা ভাবছেন। সেটাও আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়েছে। কেননা ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিতে রাশিয়া থেকে আমদানি করা নিকেল ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সেটার সরবরাহ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

বন্দনা হরি বলেন, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় বেশির ভাগ দেশ উদীয়মান অর্থনীতির ও জনবহুল। এসব দেশের অনেক মানুষ নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের। রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতে জ্বালানি তেলসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সূত্র: বিবিসি।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পেট্রোল-ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণা
ভিসা ছাড়াই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে মুসলিম ৬ দেশ
মারা গেছেন পণ্ডিত ভবানী শঙ্কর
২০২৩ এ আলোচিত বিশ্বের সেরা ১০ ঘটনা
ব্রিকসে যোগ দেবে না আর্জেন্টিনা
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী
১০ টাকাতেই মিলবে বই
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট
সৌদি আরবে আরো একটি স্বর্ণের খনির সন্ধান
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপলো ইন্দোনেশিয়া