রোববার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, আজ প্রথম রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ১০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ এ বিপণন কার্যক্রম চালু থাকবে।প্রাথমিকভাবে সচিবালয় সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোল চত্বর, জাপান গার্ডন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসদন, নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, কালশী এবং যাত্রাবাড়ি ভ্রাম্যমাণ বিপণন ব্যবস্থা চালু করা হবে। মাংস, দুধ এবং ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও সাপ্লাই চেইন সচল রেখে রমজান মাসে বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের লক্ষ্য। চাহিদা ও দ্রব্যের সরবরাহ বিবেচনা করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়ের পরিসর বৃদ্ধির পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে"।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরও বলেন, "প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। ভ্রাম্যমাণ বিপণনে ব্যবহৃত পরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষকে নিরাপদ খাবার পৌঁছে দেয়া সাংবিধানিক দায়িত্ব। কোনভাবেই যাতে খাবারে ভেজাল না আসে, খাবার যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ, অস্বাস্থ্যকর বা জীবাণুযুক্ত না হয় এই বিষয়টিতে খামারিদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। খাবার যাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি না হয় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে"।
মন্ত্রী বলেন, "গত বছর রমজান মাসে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ডেইরি ও পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় ব্যবস্থায় ৩৪ কোটি ৮৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৭ টাকার পণ্য বিক্রয় হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৩১০ জন ভোক্তা এবং ৮১ হাজার ৩৭৭ জন খামারি সরাসরি উপকৃত হয়েছেন"।
মন্ত্রণালয় থেকে এ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়ের সব কার্যক্রম নিয়মিত মনিটর করা হবে বলে এ সময় জানান মন্ত্রী। কম মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রির পদক্ষেপ এর আগে কেউ নেয়নি বলেও জানান মন্ত্রী। রমজান মাসে একজন লোকও যাতে কোনভাবে কষ্ট না পায় সেটা সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে এ সময় অধিক মুনাফা লাভ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
করোনায় প্রাণিসম্পদ খাতের খামারি ও উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, "কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্যাট-ট্র্যাক্স মওকুফের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে সরকার কোটি কোটি ছাড় দিলেও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িতরা লাভবান হয়েছেন। প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। করোনায় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গতি কোনভাবেই যাতে স্থবির না হয়ে পড়ে সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন"।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। এছাড়া বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মশিউর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ ও এস এম ফেরদৌস আলমসহ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প ভ্রাম্যমাণ এ বিক্রয় কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে।