গত দেড় দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, এটা তারই ফল। এখন সানেমের আশঙ্কা যদি ঠিক হয়, তবে তিন মাস পর দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০০৫ সালে ছিল।
বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়া ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে দেখা দেওয়ার পর তার বিস্তার ঠেকাতে অন্য দেশের মতোই লকডাউনে যায় সরকার। এর ফলে সব কিছু বন্ধ হয়ে পড়ায় স্বল্প আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। তাতে বলা হয়েছে, এক মাস পেরিয়ে আসা এই লকডাউন তিন মাস স্থায়ী হলে দেশের মানুষের আয় ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। যে কোনো দুর্যোগে আয়ের ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব পড়লে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছাবে।
নতুন করে আরও ২০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হবে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির একদল গবেষক বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উপর করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব নিয়ে এই গবেষণা চালান।
গবেষণায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে তুলনামূলক বিশ্লেষণের কথা জানিয়েছে সানেম। গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়, তিন মাসের লকডাউনের ফলে পরিবারের আয় ন্যূনতম এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে।
অর্থনৈতিক মডেলের ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে নতুন যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে পারে তাদের মধ্যে ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু লালন-পালন ও মাছ উৎপাদন খাত থেকে ৪৩ শতাংশ। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতের ১৬ শতাংশ, খুচরা ব্যবসা ১১ শতাংশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার ১০ শতাংশ এবং নির্মাণ খাতের ৭ শতাংশ।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র্য হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাঙামাটি। এই জেলায় নতুন করে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র্য হবে। এভাবে ময়মনসিংহে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, কক্সবাজারে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, নীলফামারিতে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, নড়াইলে ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ, নেত্রকোনায় ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, শেরপুরে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, বরগুনায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শরীয়তপুরে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ এই দুর্যোগে নতুনভাবে দরিদ্র হতে পারে।
এদিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নরসিংদী জেলায় এ দুর্যোগের অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাবঅপেক্ষাকৃত কম হতে পারে। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এসব জেলায় করোনাভাইরাস এর প্রকোপ অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রকৃতপক্ষে এসব জেলায় অনুমিত আয় ২৫ শতাংশেরও বেশি কমতে পারে। অর্থনীতির উপর করোনাভাইরাস সঙ্কটের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অর্থ খরচে তিনটি পরামর্শ দিয়েছে সানেম।
এগুলো হলো-দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে চিহ্নিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরন ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা। এটি নিশ্চিত করা যাতে প্রকৃত অর্থে যেসব শিল্প কল-কারখানা এবং গরিব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এই সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছায়। একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করা, যার মাধমে এই সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।