আদেশে বলা হয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে শেষ হবে।
ইসলামিক ফান্ডেশনের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংস্থা) জনাব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে আর্থিক ক্ষমতাসহ মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হলো। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক যোগদান না করা পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল থাকবেন এবং বিধি মোতাবেক দায়িত্ব ভাতা প্রাপ্য হবেন।
সাবেক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মদ আফজাল বিগত ১১ বছর ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। চাকরীর বয়স শেষে ২ দফায় তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুনীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে শতাধিক আত্মীয়-স্বজন নিয়োগের মাধ্যমে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। এ নিয়ে কয়েকমাস আগে ইফা কর্মীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।
সামীম আফজালের ঢাকার মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লা, বসিলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নামে-বেনামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে প্রশিক্ষণরত ইমামদের সামনে ব্যালে নৃত্য ও কাঙ্গালিনী সুফিয়ার গান আয়োজনসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কার্যকলাপেরও অভিযোগ রয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান সামীম মোহাম্মদ আফজাল। গত ১০ জুন ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ইফা ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন অবহিত করা হবে না- তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করেন ইফা ডিজি সামীম। এ সংক্রান্ত আদেশকে কেন্দ্র করে এ শোকজের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
এরপর সাপ্তাহিক বন্ধের দিন পদত্যাগপত্র দিতে সামীম মোহাম্মদ আফজাল সংস্থাটির সচিব কাজী নূরুল ইসলামকে অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। পদত্যাগপত্র টাইপও হয়েছিল। শুধু স্বাক্ষর করে জমা দেয়াই ছিল বাকি। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশত ফাইল গাড়িতে করে দফতর থেকে সরানোর চেষ্টা করেন ডিজির আস্থাভাজন একজন পরিচালক। ঘটনা টের পেয়ে এতে বাধা দেন ইফার সচিব কাজী নূরুল ইসলাম।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি ফাইলগুলো জব্দ করে নিজ জিম্মায় নেন। এ ঘটনায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বেঁকে বসেন ডিজি সামীম আফজাল।
ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগের দাবিতে জুন মাসে চারদিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
সামীম মোহাম্মদ আফজালকে শিগগিরই ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে। এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন ইফার আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে ইফা বোর্ড অব গভর্নরস সামীম আফজালের ক্ষমতা খর্ব করে। সম্প্রতি বাংলাদেশে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অধীন সিভিল অডিট অধিদপ্তরের এক বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ৯শ’ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে।