সদকার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ার একটি মূলনীতি হলো, যত বেশি এবং মূল্যবান বস্তু দিয়ে সদকা আদায় করবেন, নেকি ততো বেশি হবে৷
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন-‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’। (সহিহ বুখারি, কিতাবুল ইতক ৩/১৮৮; সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল ১/৬৯)
সদকাতুল ফিতর সংক্রান্ত হাদিস গবেষণা করলে দেখা যায় যে, পাঁচ ধরণের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়৷ খেজুর, পনির, জব, কিসমিস এবং গম৷ গম ছাড়া বাকি চারটি বস্তু দ্বারা আদায় তিন কেজি তিনশো গ্রাম এবং গম দ্বারা আদায় করলে দেড় কেজির চেয়ে একটু বেশি আদায় করতে হয়৷
এবার যদি কেউ খেজুর দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায়, তাহলে আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি ১০০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩২৫৬/- তিন হাজার দুই শত ছাপ্পান্ন টাকা। মধ্যম ধরনের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩০০/- টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭/- নয়শত সাতাত্তর টাকা।
কিসমিস প্রতি কেজি ২৩০/- টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮/- (সাত শত আটচল্লিশ) টাকা।
পনির প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮/- (এক হাজার ছয় শত আটাশ) টাকা।
গম প্রতি কেজি ৪৫ টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭০ টাকার মতো৷
এখন আমাদের কর্তব্য হলো, আমরা প্রত্যেকে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায় করব৷ কিন্তু আমাদের সমাজে যাদের খেজুরের মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করার সামর্থ আছে, তারাও দেখা যায় সর্বনিম্ন গমের মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করে৷ এমনভাবে যাদের কিসমিসের মূল্য দিয়ে আদায় করার সামর্থ আছে, তারাও গমের মূল্য দিয়ে আদায় করে৷
এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। ইমাম আবু হানিফাও (রহ.) এমনটি বলেছেন৷
তার নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা।
সাহাবায়ে কেরাম আধা সা গম দিয়ে সদকা আদায় করার কারণ ছিল, আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমান ছিল৷
হজরত মুআবিয়া (রা.) এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদকাতুল ফিতরের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হত। ( আল ইসতিযকার ৯/৩৫৫)
তাই আসুন, শুধু গমের মূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় না করে সামর্থনুযায়ী খেজুর, পনির এবং কিসমিসের মুল্য দিয়েও সদকাতুল ফিতর আদায় করার চেষ্টা করি৷