আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.

আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য সর্বমোট ১০৪ টি কিতাব নাজিল করেছেন। তার মধ্যে তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন মজিদ শ্রেষ্ঠতম ও সবচেয়ে বড়। তাওরাত মুসা আ.-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। মূসা আ. আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মূসা আলাইহিস সালামকে কালিমুল্লাহ বলা হতো মূলত আল্লাহর সঙ্গে তার সরাসরি কথা বলার বিশেষ এই গুণের কারণে।


আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলার প্রেক্ষাপটটি ছিল এরকম-


হজরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ান থেকে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে (যিনি শুআইব আ.-এর মেয়ে ছিলেন) নিজের মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন অন্ধকার রাত ছিল এবং রাস্তাও অপরিচিত ছিল। এ সময় তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠে। তাই তখন আগুনের প্রয়োজন ছিল। এই বিপদের মুর্হুতে মুসা আ, হঠাৎ দূর থেকে আগুনের শিখা দেখতে পান। তখন তিনি পরিবারকে অর্থাৎ স্ত্রী, সন্তান এবং চাকরদের বলেন, তোমরা এখানে অপেক্ষা কর। আমি আশা করি সেখান হতে আগুন সংগ্রহ করব অথবা কমসে কম সেখান হতে পথের সন্ধান পাব।


এ সময় আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে তার কথা হয়। আল্লাহর সঙ্গে তার সরাসরি কথোপকথনের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, আমি তাকে ডেকেছিলাম [মুসা (আ.)] তুর পাহাড়ের ডান দিক থেকে এবং অন্তরঙ্গ আলাপে তাকে নৈকট্য দান করেছি। (সূরা মারিয়াম, আয়াত, ৫২)।


আল্লাহর সঙ্গে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলার বিষয়টি পবিত্র কোরআনের সূরা ত্বহাতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মূসা আলাইহিস সালামকে যা বলেছিলেন-


فَلَمَّاۤ اَتٰىہَا نُوۡدِیَ یٰمُوۡسٰی ؕ ١١ اِنِّیۡۤ اَنَا رَبُّکَ فَاخۡلَعۡ نَعۡلَیۡکَ ۚ  اِنَّکَ بِالۡوَادِ الۡمُقَدَّسِ طُوًی ؕ ١٢ وَاَنَا اخۡتَرۡتُکَ فَاسۡتَمِعۡ لِمَا یُوۡحٰی ١٣ اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَاَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ ١٤ اِنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ اَکَادُ اُخۡفِیۡہَا لِتُجۡزٰی کُلُّ نَفۡسٍۭ بِمَا تَسۡعٰی ١٥ فَلَا یَصُدَّنَّکَ عَنۡہَا مَنۡ لَّا یُؤۡمِنُ بِہَا وَاتَّبَعَ ہَوٰىہُ فَتَرۡدٰی ١٦ وَمَا تِلۡکَ بِیَمِیۡنِکَ یٰمُوۡسٰی ١٧


যখন সে আগুনের কাছে আসল তখন তাকে আহবান করা হল, ‘হে মূসা’।নিশ্চয় আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেল, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ’। ‘আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, সুতরাং যা ওহীরূপে পাঠানো হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন’। ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’। ‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়’। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন কিছুতেই তাতে ঈমান আনয়নে তোমাকে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর ‘হে মূসা, তোমার ডান হাতে ওটা কি’? (সূরা ত্বহা, আয়াত, ১১-১৭)


আল্লাহ তায়ালার কথার পর মূসা আ. যা বলেছিলেন-


قَالَ ہِیَ عَصَایَ ۚ اَتَوَکَّوٴُا عَلَیۡہَا وَاَہُشُّ بِہَا عَلٰی غَنَمِیۡ وَلِیَ فِیۡہَا مَاٰرِبُ اُخۡرٰی


সে বলল, ‘এটি আমার লাঠি; আমি এর ওপর ভর করি, এটি দিয়ে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি এবং এটি আমার আরো অনেক কাজে লাগে।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত, ১৮)


আল্লাহ তায়ালা আরও যা বলেন মূসা আ.-কে


قَالَ اَلۡقِہَا یٰمُوۡسٰی ١٩ فَاَلۡقٰہَا فَاِذَا ہِیَ حَیَّۃٌ تَسۡعٰی ٢۰ قَالَ خُذۡہَا وَلَا تَخَفۡ ٝ سَنُعِیۡدُہَا سِیۡرَتَہَا الۡاُوۡلٰی ٢١ وَاضۡمُمۡ یَدَکَ اِلٰی جَنَاحِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ اٰیَۃً اُخۡرٰی ۙ ٢٢ لِنُرِیَکَ مِنۡ اٰیٰتِنَا الۡکُبۡرٰی ۚ ٢٣ اِذۡہَبۡ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ اِنَّہٗ طَغٰی


তিনি বললেন, ‘হে মূসা! ওটা ফেলে দাও। অতঃপর সে তা ফেলে দিল; অমনি তা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল।


এ আয়াতে মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আল্লাহর সরাসরি কথোপকথনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটা আল্লাহর দরবারে মুসা (আ.)-এর উচ্চ মর্যাদার প্রমাণ। এ বিষয়টিকে আলোচ্য আয়াতে ‘আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বললেন, ‘ওটা ধর এবং ভয় করো না, আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব’। ‘আর তোমার হাত তোমার বগলের সাথে মিলাও, তাহলে তা উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসবে কোনরূপ ত্রুটি ছাড়া; আরেকটি নিদর্শনরূপে’। এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে আমার বড় বড় নিদর্শনসমূহের কিছু দেখাব। ‘ফিরআউনের কাছে যাও; নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে’। (সূরা ত্বহা, আয়াত, ১৯-২৬)


মূসা আ.কে আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি যা বলেন,


قَالَ رَبِّ اشۡرَحۡ لِیۡ صَدۡرِیۡ ۙ ٢٥ وَیَسِّرۡ لِیۡۤ اَمۡرِیۡ ۙ ٢٦ وَاحۡلُلۡ عُقۡدَۃً مِّنۡ لِّسَانِیۡ ۙ ٢٧ یَفۡقَہُوۡا قَوۡلِیۡ ۪ ٢٨ وَاجۡعَلۡ لِّیۡ وَزِیۡرًا مِّنۡ اَہۡلِیۡ ۙ ٢٩ ہٰرُوۡنَ اَخِی ۙ ٣۰ اشۡدُدۡ بِہٖۤ اَزۡرِیۡ ۙ ٣١ وَاَشۡرِکۡہُ فِیۡۤ اَمۡرِیۡ ۙ ٣٢ کَیۡ نُسَبِّحَکَ کَثِیۡرًا ۙ ٣٣ وَّنَذۡکُرَکَ کَثِیۡرًا ؕ ٣٤ اِنَّکَ کُنۡتَ بِنَا بَصِیۡرًا ٣٥


সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন’ ‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’।‘আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন। আমার ভাই হারুনকে; ‘তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে শরীক করুন’। ‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি’, এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি। ‘আপনিই তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা’...। (সূরা ত্বহা, আয়াত, ২৭-৩৫)

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা কোর্স সম্পন্ন
আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.
মিশরে বায়তুল মোকাররমের ইমামকে সম্মাননা প্রদান
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় কোনটি?
জান্নাতিদের যে বিশেষ দানে সন্তুষ্ট করবেন আল্লাহ
নেক আমলের কারণে দুনিয়ায় যে উপকার পাবেন
রমজান শুরুর তারিখ ঘোষণা করলো আরব আমিরাত
একসঙ্গে অনেককে সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?
নবীজীর রওজায় বছরে একবারের বেশি যাওয়া যাবে না