বড় পতনের দিনে পিকে হালদারের লুটপাটের শিকার দুই কোম্পানির চমক

বড় পতনের দিনে পিকে হালদারের লুটপাটের শিকার দুই কোম্পানির চমক
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদর কমেছে ৩৪৮টি কোম্পানির, বিপরীতে দর বেড়েছে মাত্র ২৬টি কোম্পানির শেয়ারের। এর মধ্যে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) গ্রেফতারের খবরে বড় পতনের দিনেও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থেকে বড় ধরনের চমক দেখিয়েছে।

গত শনিবার (১৪ মে) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করে দেশটির তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। যেদিন পিকে হালদারকে গ্রেফতার করা হয় সেদিন বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সাপ্তাহিক ছুটিতে ছিল। পরের দিনও (রোববার) বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি ছুটির কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারে। গ্রেফতারের পর আজ সোমবার (১৬ মে) দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়।

আজ বড় পতনের দিনে প্রধান শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল ফাস (এফএএস) ফাইন্যান্সের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটি ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। গেইনার তালিকার আরেকটি কোম্পানি ন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার সোমবার দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা (সার্কিট ব্রেকার) স্পর্শ করে।

ডিএসইর দেওয়া তথ্যমতে, আগের কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৫ টাকা ১০ পয়সা। আজ লেনদেন শেষে এর শেয়ারের ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ৫ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আর বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার ৫ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। আজ লেনদেন শেষ হয়েছে ৬ টাকায়। এই কোম্পানির শেয়ারদরও আজ ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে শেয়ারবাজার থেকে ভিন্ন নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের শেয়ার কিনে মালিকানায় আসেন। কোম্পানি তিনটির দখল নিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালান প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি ও আত্মসাতের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। পি কে হালদারের লুটপাটের শিকার এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই আর্থিক দুরবস্থায় পতিত হয়েছে।

ব্যাপক লোকসানে থাকা এসব কোম্পানি গত কয়েক বছর বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। অস্বাভাবিকভাবে শেয়ারদর পতন হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে শেয়ারবাজারে পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে এখনো কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হলেও দীর্ঘদিন ধরে দরপতনের মধ্যে পতিত হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানায়, ২০১৯ সাল থেকে বড় ধরনের লোকসান গুনছে ফাস ফাইন্যান্স। ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ১২ পয়সা করে মোট ১৫০ কোটি ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা লোকসান করে ফাস ফাইন্যান্স। পরের বছর ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ১৪ টাকা ৬১ পয়সা করে মোট লোকসান দাঁড়ায় ২১৭ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ২০ পয়সা করে মোট লোকসান হয়েছে ১০৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

অপরদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংও ২০১৯ সাল থেকে লোকসানে রয়েছে। ২০১৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ১২৬ টাকা ৩৬ পয়সা করে মোট লোকসান দাঁড়ায় ২৮০২ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৩১ টাকা ৩০ পয়সা করে মোট লোকসান হয় ৬৯৪ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৭১ পয়সা করে মোট লোকসান হয়েছে ১৭১ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত