দেশের ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে সহায়তা জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো সুদ মুক্ত সুবিধায় ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ।
একইসঙ্গে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টে সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ৪.৫ ডলার বিলিয়ন ডলার নেওয়ার আলোচনাও শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামী তিন বছরে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এ দুটি ঋণসংস্থা থেকে সরকার এভাবে অন্তত ৫.৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
আইএমএফ-এর ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধির সঙ্গে বুধবার (২৯ জুন) ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবেন অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) শীর্ষ কর্মকর্তারা। এতে যোগ দেবেন- অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরীফা খাতুন।
জানা যায়, আগামী ১২ জুলাই আইএমএফ- এর একটি মিশন ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসবে। তার আগে আইএমএফ ঋণের শর্তগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে সংস্থাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে চুক্তি স্বাক্ষর হতে কমপক্ষে ৬ মাস লাগতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের 'ব্যালেন্স অব পেমেন্ট' এবং 'কারেন্ট একাউন্ট' ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও গত আট বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা পরিস্থিতি নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যাবে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭.৫৭ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রা বাজারে ডলারের সংকট মেটাতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডি কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানান, চলমান অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আগামী তিন বছর ধরে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আইএমএফ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানও আইএমএফ থেকে বাজেট সহায়তা নিচ্ছে। এ সহায়তা পাওয়ার পর আইএমএফ এর শর্ত পূরণ করতে গিয়ে উভয় দেশকে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি প্রত্যাহার করে দাম বাড়াতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৫০০ রূপি হয়েছে। পাকিস্তানেও দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।