ঢামেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আমহেদ খান বলেন, ‘আপতত এখানে ভর্তি থাকা রোগীদেরকেই এ থেরাপি দেওয়া হবে। পরে কুর্মিটোলা বা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল আগ্রহী হলে সেখানেও এ থেরাপি দেওয়া হবে।’ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জনিয়েছেন, রক্তের তরল হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলা হয়। রক্তের মধ্যে তিন ধরনের কণিকা ছাড়া বাকি অংশই রক্তরস। মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরের রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশই রক্তরস।
ঢামেক হাসপাতালে প্লাজমা থেরাপির শুরু হবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডা. দিলদার হোসেন বাদল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. পিয়াসের প্লাজমা দেওয়ার মাধ্যমে। তারা দু'জনই করোনা জয়ী। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন ডা. তানভীর ইসলাম।
অধ্যাপক মহিউদ্দিন বলেন, ‘যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তাই প্লাজমা দেওয়ার বিষয়ে খুব একটা সাড়া পাচ্ছি না। এজন্য সুস্থ হওয়াদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসেন।’
চিকিৎসকরা জানান, প্লাজমা থেরাপিতে শতভাগ সাফল্য আসবে বা মৃত্যুরোধ করা না যাবে না। তবে যেহেতু কোভিড-১৯ এর কোনও চিকিৎসা এখনও নেই আর প্লাজমা থেরাপির কোনও ক্ষতি নেই তাই পরীক্ষামূলক এটা দিতে সমস্যা নেই।
প্লাজমা থেরাপি কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এ ভাইরাস মোকাবিলা করে টিকে থাকতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির প্লাজমায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিই অসুস্থদের সারিয়ে তোলার জন্য ব্যবহার হবে। এটা একেবারেই রক্তদানের প্রক্রিয়ার মতো একটি প্রক্রিয়া, কেবল এখানে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হতে হবে এটুকুই পার্থক্য। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ১৪ দিন একজন ব্যক্তি প্লাজমা দিতে পারেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) একে অনুমোদন দেওয়ার পর অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন এ উদ্যোগ নেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হলে ১২ এপ্রিল এ নিয়ে বৈঠক হয়। ১৮ এপ্রিল তাকে প্রধান করে চার সদস্যের টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বাকি তিন সদস্য হলেন ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি।