এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ জানিয়ে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেখিয়ে সংগঠনটি বলছে, ভারত ও নিউজিল্যান্ড এই চার্জ মওকুফ করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকার সারা দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, যা ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার যদিও সমুদ্রবন্দরগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে, তবু অন্যান্য সেবা খাত অনেকাংশেই বন্ধ বা সীমিত থাকায় পণ্য বা কনটেইনার খালাসে অনিচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রতা হয়ে যাচ্ছে।
এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে পারছে না। তার ওপর সাধারণ ছুটি চলা অবস্থায় কিছু বিদেশী শিপিং কোম্পানি/এজেন্ট তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারকদের ওপর তাদের মর্জিমতো অতিরিক্ত কনটেইনার ডিটেনশন/ডেমারেজ চার্জ আরোপ করছে।
কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার দরুণ শিপিং কোম্পানিগুলো/এজেন্ট বা তাদের মনোনীত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সরা এ অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করতে পারছে, এমন তথ্য উল্লেখ করে ডিসিসিআই বলছে, শিপিং কোম্পানি অথবা তাদের মনোনীত এজেন্ট কর্তৃক অনিয়ন্ত্রিত কনটেইনার ডিটেনশন/ডেমারেজ চার্জ আরোপের ফলে আমদানীকৃত উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমাদের বিশ্ববাজারে রফতানি সক্ষমতাকে হ্রাস করছে। স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য আমদানি করা পণ্যের মূল্যও এতে করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর গত ২৯ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে শিপিং লাইনগুলোকে বা তাদের মনোনীত এজেন্টদের আমদানিকারকদের ওপর লকডাউন চলাকালে কোনো প্রকার ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সত্ত্বেও শিপিং কোম্পানিগুলো কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ অব্যাহত রেখেছে, যা এ কঠিন সময়ে আমদানিকারকদের ওপর বাড়তি বোঝা হিসেবে আরোপিত হচ্ছে।
ডিসিসিআই মনে করছে, লকডাউন চলাকালীন শিপিং লাইনস বা এজেন্টগুলোর কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ আরোপ করা উচিত নয় এবং নতুন করে বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। ‘পোর্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং বন্দরের কনটেইনার জট কমাতে যদি কোনো শিপিং লাইনস/এজেন্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো বিধিমালাবহির্ভূত কাজ করে, তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া বিদেশী শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য একটি অভিন্ন নীতিমালা থাকা উচিত, যাতে আমদানি-রফতানি পণ্যের জাহাজীকরণের সময় যৌক্তিক ও যথোপযুক্ত হারে কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ নির্ধারিত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই আরো জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২০০৬ সালে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন মোতাবেক যে লাইসেন্স আইনের অধীন শিপিং লাইনের এজেন্টগুলো বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সরা পরিচালিত হয়ে থাকে, সেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে এজেন্টগুলো বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সদের রাষ্ট্র প্রণীত বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রণীত আইন, নীতিমালা, বিধিমালা, নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি বা নোটিস মেনে চলতে হবে। অন্যথায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডর্স/শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। যেহেতু এজেন্টগুলো/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্সরা মূল শিপিং লাইনসের হয়েই কাজ করে, তাই মূল শিপিং লাইনগুলোকেও এ নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিসিসিআই বলছে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনাগুলোকে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে যেন লকডাউন চলাকালীন সংগৃহীত কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ শিপিং লাইনসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স হিসেবে বিদেশী মুদ্রায় পরিশোধ না করা হয়।
অন্যদিকে সর্বোচ্চ কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ কত হতে পারে, তার একটি সুনির্দিষ্ট সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে ডিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, মাঝেমধ্যে দেখা যায় কনসাইনমেন্ট বা চালানের মোট মূল্যের চেয়ে ক্রমবর্ধিত ডেমারেজ চার্জ বেশি নির্ধারিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩-এর ৭৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা যেতে পারে। ফলে আমদানিকারকদের ওপর তাদের পূর্বানুমোদন ছাড়া শিপিং লাইনসগুলো তাদের মর্জিমতো ডেমারেজ চার্জ আরোপ করতে পারবে না। আমরা যদি অন্যান্য দেশের উদাহরণ দেখি তাহলে দেখা যায়, ভারত ও নিউজিল্যান্ড তাদের শিপিং লাইনসগুলোকে এরই মধ্যে লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় পক্ষ আমদানিকারদের ওপর ডেমারেজ চার্জ আরোপ না করতে অনুরোধ জানিয়েছে। ভারতের ও নিউজিল্যান্ডের শিপিং লাইনসগুলো তাদের রাষ্ট্র প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে আমদানিকারকদের চার্জ মওকুফ করে পত্র প্রদান করেছে।
এর বাইরে ডিসিসিআই বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো/ অফডক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লকডাউন চলাকালীন খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ও রফতানি পণ্য কনটেইনারে লোডিং চার্জ মওকুফের আহ্বান জানিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের এ ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন বন্দর সম্পর্কিত চার্জগুলো যেমন ক্রেন চার্জ, লোডিং, আনলোডিং চার্জ, কনটেইনার ডিসচার্জিং চার্জ কমানোরও আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই।