শ্রমিকদের এই এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন, যারা প্রকৃত শ্রমিক নন বলেও মত পোশাকা কারখানার মালিকদের। এ অবস্থায় কারখানা ভাঙচুরকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ মে) তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠন দুটি বলছে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত ক’দিন ধরে বেতন-ভাতা পরিশোধের আন্দোলনের নামে যেভাবে পোশাক কারখানা ভাঙচুর করছে, তাতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে গভীর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যা কোভিড-১৯ এর প্রভাবে যখন সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নড়ে গেছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের প্রধান রফতানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পখাতও বিপর্যস্ত। ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। এমনকি অনেক ক্রেতা দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এরকম একটি স্পর্শকাতর সময়ে শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদেরকে ব্যবহার করে শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়।
আবার, এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন, যারা প্রকৃত শ্রমিক নন। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে ছোট ও মাঝারি কারখানার পাশাপাশি বড় বড় কমপ্লায়েন্ট পোশাক কারখানা, যাদের কর্মপরিবেশ ভালো, বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সেগুলোও আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে বলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এই নৈরাজ্যজনক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এবং এই অরাজকতা রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সংগঠন দুটি।
বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে বেতন বোনাস ইস্যুতে কারখানা ভাঙচুর করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ, সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কারখানাগুলো সংকটের মধ্যে থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। কিছু কিছু কারখানায় অবশ্য ব্যতয় ঘটছে। এই কারখানাগুলোর অনেকেরই হাতে এখন কোনো কাজ নেই। তারপরও কারখানাগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, ত্রি-পক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানা ভাঙচুরের সম্মুখীন হচ্ছে, যা শিল্পের জন্য একটি অশনি সংকেত। এটি ভবিষ্যতে উদ্যোক্তাদেরকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিরুৎসাহিত করবে বলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মনে করে।
সংগঠন দুটি আরও বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান রফতানিখাত পোশাক শিল্পসহ রফতানিখাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও অনেক উদ্যোক্তা আবেদন করেও এখনও ঋণ পাননি। ঋণ আবেদনের জন্য গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএ এর সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি কারখানা এবং বিকেএমইএ এর কাছ থেকে সনদ নিয়েছে ৫১৯টি কারখানা।
পরিশেষে, শিল্প ও শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক। শিল্প ভালো থাকলে শ্রমিক ভালো থাকবে। শ্রমিক তার জীবিকার উৎস ধ্বংস হতে দিবে না, এটাই কাম্য। মঙ্গলবার (১৯ মে) পর্যন্ত ডিবিএল, ওপেক্স, মেডলার, ইমপ্রেস, ভিশন, ডিজাইনটেক্স, সেনটেক্স, সিভিক এপারেলস লি. ও ফকির নিটওয়্যারসহ অনেক পোশাক কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে। বেলিসিমা ও সিভিক এপারেলস লি. এর মালিকদেরকে সরাসরিভাবে অপদস্থও করা হয়েছে, যা একান্তভাবে অনভিপ্রেত। এসব আইন বহির্ভূত ঘটনায় বহিরাগতদেরও উষ্কানি রয়েছে।
উপরোক্ত ঘটনাগুলোর উপযুক্ত ছবি, তথ্য ও পর্যাপ্ত প্রমাণ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর হাতে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি চলমান থাকলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি ও ভাঙচুরের কারণে কারখানা ও ব্যবসা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, বিশেষ করে লাখ লাখ শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বেন।