মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘রংপুরে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সয়াবিনসহ আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ খাবার তেল আমদানি করতে হয়। সারা পৃথিবীতে দামটা কত? যারা আনবেন তারা কম দামে বিক্রি করবেন? এসবও আমাদের ভাবতে হবে। হঠাৎ করে ডলারের দামটা বৃদ্ধি হয়ে গেল। আমরা তো বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব আমাদের ওপরও পড়ছে।
বিএনপিসহ টকশো আলোচকদের প্রতি ইঙ্গিত করে টিপু মুনশি বলেন, কতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল খুললেই দেখবেন যেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে গেল। এরা (বিএনপি) বারবার যখন বিপদ আসে তখন কিন্তু এই সুরে গান ধরে। এরা কিন্তু সেই শক্তির উত্তরাধিকার, যারা এই দেশটাই চায়নি। এখন সময় হয়েছে আমাদের প্রত্যেকের পারিবারিক জীবনে, সংসার জীবনে একটু সাশ্রয়ী হওয়ার। তবে বর্তমান সংকট-সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। যেভাবে শেখ হাসিনা চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করছেন, তাতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবেই। এর জন্য খুব বেশি সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ও আদর্শের উত্তরাধিকার। অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের কাছে একটা রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আজকে যদি আমরা চারিদিকে তাকাই, দেখবেন প্রতিটা ক্ষেত্রে তার সফলতা। তার ওপর একটা ভার ন্যস্ত হয়েছে, সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তার স্বপ্ন ধারণ করেছেন। যার কারণে তিনি ১৪-১৫ ঘণ্টা কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনা অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশকে অ্যাপ্রেসিয়েট করা হয়। যে করোনা মহামারি সারা পৃথিবীতে নাড়া দিয়ে গেছে, সেখানে বাংলাদেশ শক্তভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আমরা বিশ্বে পঞ্চম। যখন বিশ্বে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির সবেমাত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী সাহস করে দেশের মানুষকে মহামারি থেকে রক্ষা করতে ১০০ মিলিয়ন ডলার ভ্যাকসিন কিনতে দিয়েছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেই ভ্যাকসিন পেয়েছি, এখন সুস্থ আছি।
তিনি বলেন, যে পাকিস্তানকে আমরা পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই পাকিস্তানের অবস্থা অর্থনৈতিকভাবে ১৯৭১ সালে ভালো ছিল। কিন্তু আজকে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন ভারতের চেয়েও আমরা অনেক দিক থেকে এগিয়ে। এত কিছু সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার কারণে।
রংপুরে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের সফরের স্মৃতিচারণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভুলতে পারি না। বঙ্গবন্ধু রংপুরে এসেছিলেন। এই বিভাগে এসেছিলেন। সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে শংকু সমজদারের স্মরণে রংপুরের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু রংপুর নয়, সারা দেশ চষে বেড়িয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে ছুটে বেড়িয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতেও তিনি ছুটে গেছেন বাংলার মানুষের কাছে। তিনি যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়ের ১৩টি বছর জেলে কাটিয়েছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। সর্বশেষে স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করল। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ ও লালন করি তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ইতিহাস সমৃদ্ধ স্যুভেনিয়র ‘রংপুরে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রকাশনাটি প্রকাশ করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন।
প্রকাশনা উৎসবের আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।
স্বাগত বক্তব্য দেন রংপুরে বঙ্গবন্ধু স্যুভেনিয়র প্রকাশনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন মিঞা, কমিটির আহ্বায়ক ও ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শেষে বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা বঙ্গবন্ধু স্মরণে শোকের গান ও কবিতা পরিবেশন করেন।