সবাই তাকিয়ে ছিলেন চিরবৈরী চীনের এমন পদক্ষেপের ফলে ট্রাম্প কী ধরনের পদক্ষেপ নেন। তবে আপাতত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে ওয়াশিংটন। আর এতেই যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার টানা দ্বিতীয় মাসের মতো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার শেষ হওয়া লেনদেনে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারের প্রধান তিনটি সূচকই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এসঅ্যান্ডপি ৫০০, ডাও জোনস এবং নাসডাক সূচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে মার্চ মাস শেষ করে। আর মে মাসের শেষে এসে আগের মাসের তুলনায় আরো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়া ব্লুচিপ স্টকস এ মাসে ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর প্রযুক্তি শেয়ারের মূল্য বেড়েছে ৬ শতাংশ পর্যন্ত।
অন্যদিকে ডাও জোনস সূচক ২৫ হাজার ৩৮৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট নিয়ে দিন শেষ করে। যদিও একদিন আগেও ৩০০ পয়েন্ট হারিয়েছিল সূচকটি। মূলত চীনের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজ কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেই আশঙ্কার মধ্যেই সূচকটি এ পয়েন্ট হারাতে শুরু করে। যদিও ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনের জের ধরে আবারো সূচক ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে শুরু করে।
শুক্রবার ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন থেকে বেইজিংয়ের ওপর নতুন করে কোনো শুল্কারোপের আভাস পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে চলতি বছরের শুরুতে দেশটির সঙ্গে করা প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই বাড়তি নজর ছিল বিনিয়োগকারীদের।
বিনিয়োগবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওয়েলস ফার্গো ইনভেস্টমেন্টের স্কট রেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার কোনোভাবেই বাণিজ্য উত্তেজনা পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না। এমনিতেই করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিনিয়োগকারীরা অনেক উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের জন্য অন্যতম চাওয়া হলো চীনের সঙ্গে বিবাদে না জড়ানো।
আর ট্রাম্পও সম্ভবত এখনই চীনের সঙ্গে আর বাড়তি কোনো বিবাদে যেতে চাচ্ছেন না। যা মার্কিন অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য আপাতত স্বস্তির বিষয়। হোয়াইট হাউজের এমন মনোভাবের প্রভাব পড়েছে দেশটির পুঁজিবাজারে। ডাও জোনস সূচক ৪ শতাংশ বেড়ে মাস শেষ করেছে। আর ব্লুচিপ সূচক ২৩ মার্চ নিম্নমুখী অবস্থা থেকে ৩৬ শতাংশ বেড়ে মাস শেষ করেছে। আর এখন পর্যন্ত ১৪ শতাংশ বেড়েছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। যদিও বছরের শুরুতেই সূচকটি ১১ শতাংশ কমেছিল।
উল্লেখ্য, এশিয়ার বাণিজ্যিক হাব বা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকং। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চলে চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণমূলক শাসন থেকে বের হওয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছে হংকংয়ের বাসিন্দারা। এ আন্দোলনের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার হংকংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জাতীয় নিরাপত্তা বিলে অনুমোদন দিয়েছে চীনের পার্লামেন্ট। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক এ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা এবং পরিচালনা নিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের শঙ্কা। চীনের পার্লামেন্টে বিলটি পাস হওয়ার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়, সেই আশঙ্কায় গত দুদিন ধরে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে বেশ ধস নামে। যদিও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প আগের চেয়ে এবার নমনীয় ভাষায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, যা পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।