একই সঙ্গে কোন উদ্যোক্তা পরিচালক নতুন বোর্ডে না থাকলেও তা অনুমোদন দিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত জুলাই মাসে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (আইন) এসএম শাকিল আখতার এবং ডেল্টা লাইফের সাসপেন্ডেড পর্ষদের পরিচালক জেয়াদ রহমানের স্বাক্ষরিত আপোষনামা এবং অঙ্গীকারনামা আপিল বিভাগে জমা দেয় আইডিআরএ। এরপরই দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এই আপোষনামায় এ কে আজাদকে দ্বিতীয় পক্ষ করা হয়। একই সঙ্গে সাকিব আজাদকে নতুন পর্ষদের পরিচালক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজারের আলোচিত এক বড় বিনিয়োগকারীকে নিয়ে এ কে আজাদের মালিকানাধীন
একটি গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়। সংবাদটি নিয়ে সব মহলেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ফলে দেশের শেয়ারবাজারে শুরু হয় টালমাটাল অবস্থা। জানা গেছে ওই বিনিয়োগকারীর নিয়ন্ত্রনে বড় অংশ ছিল ডেল্টা লাইফের শেয়ার। তখন গুন্জন ছিল ডেল্টা লাইফের শেয়ার দখলের জন্য এমন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এখন প্রকাশ্যে এসেছে সেই গুন্জন!
এদিকে, এই অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি এবং অন্য শেয়ারহোল্ডারদের সংক্ষুব্ধ হবার বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে তা সংশোধনের জন্য আপিল বিভাগ সময় দেন।
সূত্র জানায়, আপোষনামায় বীমা আইনের ৭৬ ধারা লঙ্গন করে কোন উদ্যোক্তা পরিচালক নতুন পরিচালনা পর্ষদে না রেখেই পর্ষদ গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের ২১ মে ২০১৯ খ্রিঃ- এর স্মারক অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদে ৩০% শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোন প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করেই ১৯.১৭ শতাংশ শেয়ার ধারকদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার জন্য আপোষ করা হয়েছে।যেখানে ১৫ জন ২ শতাংশ শেয়ারধারী থাকলেও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মাত্র ৮ জনকে নিয়ে কীভাবে আপোষনামায় স্বাক্ষর করেছে সে বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেয়ারহোল্ডারা। যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে খোদ আইডিআরএ।
এছাড়াও একই পরিবারের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকেই পরিচালনা পর্ষদে রাখার অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। নতুন পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে সুরাইয়া রহমান, জেয়াদ রহমান এবং আদিবা রহমান একই পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে সুরাইয়া রহমান এবং জেয়াদ রহমান সাসপেন্ডেড বোর্ডের সদস্য ছিলেন। আর আদিবা রহমান ছিলেন ডেল্টা লাইফের প্রাক্তন সিইও।
জানা গেছে, আরও ৪ জন শেয়ারহোল্ডার অঙ্গীকারনামার ফলে সংক্ষুব্ধ হয়ে আইডিআরএ-র কাছে চিঠি দিয়েছে। এরই মধ্যে গত ১৭ আগস্ট আইডিআরএ-র নিযুক্ত আইনজীবী শেখ মোর্শেদ (অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল)-কে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আইডিআরএ।
সুত্র মতে, শেয়ারহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে তৈরি আপোষনামার এবং অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারগন। অঙ্গীকারনামার আইনী ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর আইডিআরএ কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবীকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
এদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারী ১১ তারিখে হাওলাদার ইউনুস এবং ফেমস এন্ড আর-দুইটি অডিট ফার্মের রিপোর্টে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে আইডিআরএ। সেই সাসপেন্ডেড পর্ষদের একই পরিবার থেকে তিনজনকে এবার নতুন পর্ষদেও রাখা হয়েছে।
এদিকে অডিট ফার্মের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদকে সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে আজিজ হালিম চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস এবং একনাবিন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস নামক দুইটি অডিট ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়। অডিট ফার্ম দুটির রিপোর্টে মন্জুরুর রহমান এবং তার পরিবার কর্তৃক বীমা আইন, ২০১০ এর ৭৬ ধারা ও বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ারধারণ বিধিমালা, ২০১৬ এর ৩(৫) এবং ৪ (১), (২) এবং (৩) বিধি ভঙ্গ করে ১০ শতাংশ এর অধিক অর্থ্যাৎ ২২.৭৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ, কোম্পানী আইনের ৮৫ ধারা লঙ্গন করে সাধারণ কর্মচারীগন ভোট প্রদান, সেন্ট্রাল ডাটাবেজ থেকে পলিসিহোল্ডারদের ডাটা ডিলিট, ভুয়া পলিসি নাম্বার তৈরি করে কোম্পানী থেকে টাকা উত্তোলন, সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকিসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পায়।
এদিকে অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ডাটা ডিলিটের একটি মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ করে। দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৬৩৮ কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিং-এর তদন্ত চলমান রয়েছে।এছাড়াও জিয়াদ রহমান এবং আদিবা রহমান ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলায় অভিযুক্ত হলেও এখনো আদালতে জামিন পাননি বলে জানা গেছে