ইয়াহু ফাইন্যান্সের খবর অনুসারে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি গত মাসে সাত শতাধিক মার্কিন নির্বাহী ও বোর্ড সদস্যদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক জানিয়েছেন যে, তারা কর্মিবাহিনীর আকার ছোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিংবা এরই মধ্যে ছাঁটাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এছাড়া ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগ স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী আকর্ষণে চালু করা বোনাস বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনছে। যদিও গত এক বছরে এ বোনাস খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উত্তরদাতারা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং ভবিষ্যতের জন্য কর্মীদের দক্ষতার উপযুক্ত মিশ্রণ তৈরিতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটি আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়। কারণ কয়েক বছর ধরে নিয়োগের উন্মাদনা এবং কঠোর শ্রমবাজারের পরে নির্বাহীরা এখন সঠিক দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন।
তবে প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের মধ্যে কিছু বিপরীত কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একদিকে ব্যবসাগুলো কর্মী সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান মজুরিও বাড়াচ্ছে। জরিপে অংশ নেয়া দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান মজুরি বাড়ানো কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। এছাড়া প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসা আরো বেশি কর্মীকে স্থায়ীভাবে বাড়ি থেকে কাজের অনুমতি দিচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতি কঠোর করা এবং মন্দার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই সমীক্ষাটি প্রকাশ হলো। নীতিনির্ধারকরা জুলাইয়ে সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছেন। পাশাপাশি মন্দার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আগামীতে আরো সুদের হার বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। আবাসন খাতের মতো অর্থনীতির কিছু অংশ এরই মধ্যে ধীর হয়েছে। যদিও কয়েক মাস ধরে শ্রমবাজার শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। গত মাসেও নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ সময়ে নিয়োগকর্তারা ৫ লাখ ২৮ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। এতে বেকারত্ব হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশের ঐতিহাসিক নিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।
তবুও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে গুগল, ওয়ালমার্ট, অ্যাপল, মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ কিংবা ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
গত মাসে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল শ্রমবাজারকে খুব উত্তপ্ত হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। জুলাইয়ের কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। তবে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, উচ্চ সুদহারের কারণে সম্ভবত শ্রমবাজারের পরিস্থিতি কিছুটা শীতল হবে। যদিও বেকারত্ব হার খুব বেশি বাড়বে না বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং তথাকথিত ধীর অবতরণ সম্পন্ন করা। আমি বলতে চাচ্ছি, খাতগুলোয় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। এর মাধ্যমে অর্থনীতি ধীর হয়ে আসবে। আমরা এ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
পিডব্লিউসির লোকবল ও প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান ভূষণ শেঠি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক দুই ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। তবে কর্মী ছাঁটাই কিংবা সুবিধা প্রত্যাহারের মতো সংবেদনশীল পরিস্থিতি পরিচালনায় সংস্থাগুলোকে আরো সাবধানী হতে হবে। স্বল্পমেয়াদে এমনভাবে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যেন কোম্পানির সুনাম নষ্ট না হয়।