সিঙ্গাপুরের আবাসন খাতে চীনা নাগরিকদের বিনিয়োগ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটিতে বিদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাড়ির ক্রেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বেশি স্থিতিশীলতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক রিয়েল এস্টেট প্লাটফর্ম অরেঞ্জটি অ্যান্ড টাইয়ের তথ্য অনুসারে, চীনের মূল ভূখণ্ডের নাগরিকরা সর্বশেষ প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরে ৩৯১টি ফ্ল্যাট ও কনডোমিনিয়াম কিনেছেন। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ সংখ্যা ১৮১টি ছিল। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকে কেনা ফ্ল্যাটের সংখ্যা আগের রেকর্ডের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরে চীনাদের কেনা ফ্ল্যাটের সংখ্যা রেকর্ড ৪৬৭টিতে উন্নীত হয়েছিল। এরপর আরো দুই প্রান্তিকে এ সংখ্যা চার শতাধিক ছিল। তবে কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নগর রাষ্ট্রটির রিয়েল এস্টেট খাতে চীনাদের বিনিয়োগ কমে যায়।
অরেঞ্জটি অ্যান্ড টাইয়ের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন সান বলেন, বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা চীনারা প্রায়ই নতুন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনছেন। এখানে আমরা দেখছি, অনেক চীনা ক্রেতা তাদের অর্থ নিরাপদ রাখতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট খুঁজছেন। রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত হওয়ায় ধনী চীনারা সিঙ্গাপুরকে বেছে নিচ্ছেন। পাশাপাশি কিছু চীনা এরই মধ্যে পড়াশোনা ও ব্যবসার জন্যও দেশটিতে বসবাস শুরু করেছেন।
নগর রাষ্ট্রটির প্রায় ৬০ লাখ নাগরিকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চীনা মান্দারিন ভাষায় কথা বলে। চীনা প্রবাসীরা মালয়েশীয়দের পরে দেশটিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। বর্তমানে সেখানে চীনাদের সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার। বিনিয়োগ আকর্ষণে এগিয়ে থাকার ক্ষেত্রে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও বড় একটি কারণ।
রিয়েল এস্টেট খাতের গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান জুওয়াই আইকিউআই ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পূর্বাভাসে বলেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা কম। সংস্থাটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ক্যাশিফ আনসারি দেশটির সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল ও সুনিয়ন্ত্রিত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, চীনারা তাদের সম্পদকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে সিঙ্গাপুরে বাড়ি কিনছেন। এ বিনিয়োগে মুদ্রার বিনিময় হার এবং মোট দেশজ উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধিজনিত ঝুঁকিও কম।
তাছাড়া অন্যান্য দেশের কাছে চীনা গেটওয়ে শহর হিসেবেও সিঙ্গাপুরের খ্যাতি রয়েছে। চীনা নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে নগর রাষ্ট্রটিতে কেনাকাটা ও বসবাস করছেন। এ বিষয়গুলোও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করছে।
অরেঞ্জটি অ্যান্ড টাইয়ের ক্রিস্টিন সান বলেন, সিঙ্গাপুর গত এপ্রিলে কভিডজনিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর থেকেই ক্রেতারা সরাসরি গিয়ে ফ্ল্যাট পছন্দ করতে পারছেন। কভিডজনিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে অতিধনী চীনারা ভার্চুয়ালি ফ্ল্যাট কেনা চালিয়ে গিয়েছেন। চীনে ফেরার পর দীর্ঘ কোয়ারেন্টিন এড়াতে তারা এ পদক্ষেপ বেছে নিয়েছিলেন। তবে এখন সেই পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। প্রায় অর্ধেক চীনা ক্রেতা তাদের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। বাকিরা তাদের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে থাকেন।
তবে সিঙ্গাপুরের রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশী ক্রেতারা মূল্যনির্ধারণ নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। গত জানুয়ারি থেকে আবাসন খাতের ক্রয়ে বিদেশী ক্রেতাদের ৩০ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে তারা এখন উল্লেখযোগ্য ট্যাক্স ও শুল্কের মুখোমুখি হয়েছেন। তার পরও দেশটিতে বিদেশী বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ভাটা পড়েনি। এপ্রিল-জুন সময়ে সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ১৭২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন বিদেশীরা। বছরের প্রথম তিন মাসে এ সংখ্যা ছিল ৮৭৩। এ সময়ে মালয়েশীয়রা ২১৮টি ফ্ল্যাট কিনেছে। পাশাপাশি ভারতীয়রা কিনেছে ১২৩টি।