বাজেট বক্তব্যের কিছু অংশ তিনি পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া তিনি স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তব্যের বিভিন্ন অংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করছেন।
বাজেট পেশের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী সংসদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে যোগ দেননি। তবে সিডিউল অনুযায়ী যোগ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবার বিশেষ ব্যবস্থায় সংসদের বাজেট অধিবেশন হচ্ছে। সংক্রমণ এড়াতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ব্যবস্থা। অধিবেশনে সংষদ সদস্যরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ও গ্লাভস পরে অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন। অধিবেশন কক্ষে কর্মরত কর্মচারীরাও মাস্ক, গ্লাভস ও মাথা ঢেকে দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে স্পিকারের আসনের নীচে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সংখ্যাও কমানো হয়েছে।
অধিবেশন কক্ষের ভেতরে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাময়িকভাবে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির ব্যাপারে হুইপরা একটি তালিকা করেছেন। সংসদ সদস্যরা গড়ে তিনদিনের মতো বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। কোনও কোনও সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে দুই দিনেরও আছে আবার কারও কারও তিন দিনের বেশি আছে। অধিবেশনের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে এটা করা হয়েছে।
এছাড়া অধিবেশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত অন্যদের উপস্থিত না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সাধারণত বাজেট পেশের দিন সংসদে প্রায় সকল সংসদ সদস্যই উপস্থিত থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে উপস্থিতি সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। অন্য সময় বাজেট পেশের দিন সংসদ সদস্যের বাইরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সংসদ ভবন সরব থাকলেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অন্য বছরগুলোতে সরাসরি বাজেট অধিবেশন প্রত্যক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগন, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক মিশন সমূহের প্রতিনিধি, দেশের অর্থনীতিবিদ, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিগণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান, বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংসদের গ্যালারিগুলো রয়েছে এবার একেবারেই ফাঁকা। এমন কি যেসব সংসদ সদস্যরা বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত সহকারিদেরও সংসদ ভবনে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়নি।
এছাড়া এবার সংসদে সরাসরি প্রবেশ করে গণমাধ্যমকর্মীদেরও সুযোগ দেয়া হয়নি সংবাদ সংগ্রহের। আগে থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের সংসদে প্রবেশ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারিত লাইভ অনুষ্ঠান থেকে সংবাদ সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অন্য বছরগুলোতে সংসদ ভবনের গণসংযোগ শাখা থেকে সাংবাদিকদের বাজেট ডকুমেন্ট বিতরণ করা হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে এবার তা করা হয়নি। সংসদ ভবনের বাইরে অবস্থিত মিডিয়া সেন্টার থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বাজেট ডকুমেন্ট বিতরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি গণমাধ্যম থেকে মাত্র একজন প্রতিনিধিকে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংসদে যোগদানকারী সংসদ সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশন কক্ষে ঢুকছেন। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়া সংসদের মূল ভবনে ঢোকার আগে ‘জীবাণুমক্তকরণ চেম্বারের’ ভেতর দিয়ে সব সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঢুকতে হয়েছে।
বাজেট পেশের পর অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল অর্থবিল ২০২০ সংসদে উপস্থাপন করবেন। এরপর আজকের অধিবেশন শেষ হবে। পরে বাজেটের উপর আলোচনা শেষে ২৯ জুন সোমবার পাস হবে অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট এবং নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে সেদিনই অধিবেশনের সমাপ্তি টানা হতে পারে বলে জানা গেছে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রকাশিত অধিবেশনের ক্যালেন্ডার থেকে।
জানা গেছে ১১ জুন বাজেট পেশের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে ৬ দিন। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে দুই দিন। সব মিলিয়ে বাজেটের উপর ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা আলোচনা হবে।
সংসদের আইন শাখার প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে, চলবে দেড়টা পর্যন্ত।