তিনি গতকাল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) আয়োজিত ভার্চুয়াল মিটিং ও পেপারলেস রিপোর্টিং সংক্রান্ত এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন বিএপিএলসির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ।
ওয়েবিনারে ভার্চুয়াল মিটিং ও পেপারলেস রিপোর্টিং সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের প্রভাষক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বিএসইসি ও পুঁজিবাজারের অটোমেশনের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা এরই মধ্যে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের যে কোনো জায়গা থেকে সব বিনিয়োগকারী কেন এখনো ডিজিটাল মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারছে না, কেন মোবাইল অ্যাপ সবাই ব্যবহার করছে না, অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) কেন এখন পর্যন্ত ব্রোকারদের কাছে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি এসব বিষয়ে ডিএসইর কাছে জানতে চেয়েছি। এক্ষেত্রে সমস্যা কোথায় সেটা কমিশনকে অবহিত করতে বলেছি। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে যেসব বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হচ্ছে, সেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটি দেখে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।
পুঁজিবাজারে ইকুইটির বাইরে আরো নতুন পণ্য প্রচলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শুধু ইকুইটিনির্ভর থাকতে চাই না। এক্ষেত্রে আমি বন্ডের বিষয়ে জোর দিয়েছি। শরিয়াহ বন্ড সুকুকের বিষয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে। এরই মধ্যে একটি বিদেশী বিনিয়োগকারী আমার কাছে সুকুক বন্ডে ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বন্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে বীমা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে যাতে প্রতি মাসে শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্য কমিশনের কাছে পাঠাতে না হয় সেজন্য কাজ চলছে। এক্ষেত্রে আমরা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে একটি সারসংক্ষেপ নেব। আর কোম্পানিগুলো চার মাস বা ছয় মাস পরপর আমাদের কাছে তথ্য দিলেই হবে। তাছাড়া প্রথমবার ডিজিটাল এজিএম আয়োজন করতে গিয়ে যেসব ভুল-ত্রুটি হবে, সেটি কমিশন বিবেচনা করবে। এজন্য কাউকে জরিমানা করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক তার বক্তব্যে বলেন, কভিড-১৯ আমাদের ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমে যেসব এজিএম হয়েছে, তাতে কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও এটি অব্যাহত থাকবে। ডিএসইর অনেক কার্যক্রমও বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ কম হলেও যা লেনদেন হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে।
সুশাসনের ঘাটতিকে ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা উল্লেখ করে এবিবির চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা—এ তিন ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি থাকার কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তাই সব ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে সমস্যা থাকবে না। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে এজিএম করার কারণে সুশাসন বাড়ার পাশাপাশি ব্যয়ও সাশ্রয় হবে। দেশ ও বিদেশের যে কোনো জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কিছু আইনি বিধানে ভিন্নতার কারণে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ও বিভিন্ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সমস্যায় পড়তে হয়। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি বিএসইসিকে অনুরোধ জানান।