এপ্রিলের পর হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রথম ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ফাউচি বলেছেন, সবাই একসঙ্গে সংক্রমণ ঠেকাতে পারলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করোনাভাইরাসকে দূর করা যাবে।
ব্রিফিংয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রুখতে ‘আরও কার্যকর পদক্ষেপ’ নেয়ার উপর জোর দিলেও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘অগ্রগতির’ প্রশংসা করেছেন।
অথচ বৃহস্পতিবারই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ১৭৩ রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ টালিতে দেখা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ পেরিয়ে গেছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার। এ সংখ্যা বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি।
শুক্রবারের ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউস টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা উপসর্গ না থাকলেও তরুণদের ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুরোধ করেছেন।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোতে সংক্রমণ ও হাসপাতালে রোগী ভর্তির ঊর্ধ্বগতি দেখে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পই টাস্ক ফোর্সের ব্রিফিং আয়োজন করতে বলেছেন বলে পেন্স জানিয়েছেন।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় এরই মধ্যে টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ আরও শিথিলের পথ থেকে সরে এসেছে।
অনেকে বলছেন, শনাক্তকরণ পরীক্ষার আওতা বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা কিছু কিছু এলাকায় পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেশি পাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন বলছেন, দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের ১০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সমন্বয়ক ড. ডেবোরাহ বার্ক্স নির্দেশনা মেনে চলায় তরুণদের ধন্যবাদ জানান।
“আগে আমরা তাদেরকে ঘরে থাকতে বলেছিলাম, এখন তাদেরকে নিজেদের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা, তা পরীক্ষা করাতে বলছি,” বলেছেন তিনি।
শনাক্তকরণ পরীক্ষার নির্দেশনায় ‘বড় ধরনের পরিবর্তন আসায়’ কর্মকর্তারা এখন উপসর্গবিহীন এবং মৃদু আক্রান্তদেরও চিহ্নিত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এ মার্কিন বিশেষজ্ঞ।
ব্রিফিংয়ে ড. ফাউচি দেশের কোনো এলাকায় সংক্রমণ বাড়লে, তা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের উপরই প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন। দক্ষিণ ও পশ্চিমের অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভাইরাসের উত্থানের পেছনে কোথাও কোথাও আগেভাগে বিধিনিষেধ শিথিল, কোথাও নির্ধারিত সময়ে বিধিনিষেধ তুললেও ‘নিয়মমাফিক পদক্ষেপ’ না নেয়া এবং মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশনা মেনে না চলাকে দায় দিয়েছেন।
“মানুষই অন্য মানুষকে সংক্রমিত করছে। আপনিই হয়ত এমন কাউকে ভাইরাস পৌঁছে দিচ্ছেন, যিনি তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে আছেন। আপনার যেমন নিজের প্রতি দায়িত্ব আছে, তেমনি সমাজের প্রতিও আছে। আমরা যদি এ প্রাদুর্ভাব থামাতে চাই, পুরোপুরি থামাতে চাই, তাহলে আপনাদের বুঝতে হবে যে আপনারাও এ প্রক্রিয়ারই অংশ,” বলেছেন এ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ।
পেন্স তার বক্তৃতায় কয়েকমাস আগেও নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সির মতো যেসব এলাকা ভাইরাসের ‘হটস্পট’ ছিল, সেখানে সংক্রমণ মোকাবেলায় ‘অসাধারণ অগ্রগতির’ কথা তুলে ধরেন।
“আমরা ভাইরাসের বিস্তারকে শ্লথ করে দিয়েছি, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির রেখাকে সমতল করেছি, জীবন বাঁচিয়েছি,” বলেছেন তিনি।