কোম্পানিটি তাদের আইপিও আবেদনে নতুন এক শর্ত বা আবদার করেছে। সেটি হচ্ছে-আইপিও অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানির পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে শেয়ার ইস্যু করা। কিন্তু আইপিও সংক্রান্ত বর্তমান আইনে (ক্যাপিটাল ইস্যু রুলস) এ সুযোগ না থাকায় তারা আইনী শর্তের অব্যাহতি চেয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ, গত ২ মার্চ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা বিএসইসিতে আইপিওর আবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ শেয়ার ইস্যু করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে চায়। আর আইপিও অনুমোদন পাওয়ার পরে একই দরে কোম্পানির পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে ইস্যু করতে চায় ১৩ কোটি ৬১ লাখ শেয়ার। সব মিলিয়ে কোম্পানিটি ৫২ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে প্রায় ৫২৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।
কোম্পানিটি পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নামে শেয়ার ইস্যু করার জন্য ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে ১৩৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এই টাকা ব্যালান্সশিটে ‘শেয়ার মানি ডিপোজিট’ এবং কোম্পানির দায় হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদি কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন না পায় তাহলে পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে সুদসহ তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
বিদ্যমান আইন অনুসারে, আইপিও আবেদন জমা দেওয়ার আগে মূলধন উত্তোলনের (Capital Raising) মাধ্যমে যে কাউকে শেয়ার বরাদ্দ করা সম্ভব, যেটি সাধারণভাবে প্লেসমেন্ট নামে পরিচিত। কিন্তু আইপিও পাশ হওয়ার পর আইনে বর্ণিত কোটার বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠিকে শেয়ার বরাদ্দ করা সম্ভব নয়।
রবির এই আবদার পূরণ করতে হলে বিএসইসিকে তার ক্ষমতাবলে ক্যাপিটাল ইস্যু রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিতে হবে।
তবে বিষয়টিতে অন্য জটিলতাও রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জারি করা ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) এক নির্দেশনায় বলা হয়, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে কোনো কোম্পানিতে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে অর্থ জমা রাখা হলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ইস্যু করে তা ইক্যুইটিতে রূপান্তর করতে হবে। কোনোভাবেই শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে জমা করা অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর বা ফেরত দেওয়া যাবে না।
তাই রবি আজিয়াটা যদি গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইপিওর ঘোষণা দেওয়ার পরেও পরিচালক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছ থেকে ওই অর্থ জমা নিয়ে থাকে তাহলে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে তা ইক্যুইটিতে রূপান্তর করতে হবে। আর আইপিও অনুমোদন হোক না না হোক, ওই অর্থ ফেরত দেওয়া যাবে না।
এই জটিলতার কারণে রবিকে শেষ পর্যন্ত নতুন করে আইপিওর আবেদন জমা দিতে হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রবির প্যারেন্ট কোম্পানি মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ কুয়ালালামপুর স্টক এক্সচেঞ্জ ও দেশটির গণমাধ্যমকে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠঅপন রবি আজিয়াটার আইপিওতে যাওয়ার তথ্য জানায়। এর পরদিন রবি এক সংবাদ সম্মেলনে আইপিওর ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা দুটি শর্ত দিয়ে বলে ওই দুটি শর্ত পূরণ হলেই কেবল তাদের পক্ষে পুঁজিবাজারে আসা সম্ভব।
শর্ত দুটি হচ্ছে- মোবাইল কোম্পানির টার্নওভারের উপর বিদ্যমান কর প্রত্যাহার অথবা এই করের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে- তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানির করপোরেট কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ।
মালয়েশিয়ান রবি আজিয়াটা গ্রুপ বাংলাদেশের রবি আজিয়াটার ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ভারতি এয়ারটেলের বাংলাদেশ কার্যক্রম একীভুত হওয়ার মাধ্যমে তারা ২৫ শতাংশের মালিক। বাকী অংশের মালিক জাপানি কোম্পানি এনটিটি ডকোমো। ডকোমোর ওই শেয়ার অবশ্য ভারতী এয়ারটেলের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, যার আনুষ্ঠানিকতা কেবল বাকী আছে।
রবির আইপিও ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।