প্রায় একই ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিএসইর আরও ১৫টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের কয়েকটি শীর্ষ শিল্প গ্রুপ-এপেক্স গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, ল্যাব এইড গ্রুপ ও ডোরিন গ্রুপ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানও।এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এধরনের অভিযোগ অর্থসংবাদের কাছে আসে এবং এর সত্যতাও মিলেছিল। অভিযোগ উঠা সবগুলো ব্রোকারহাউজগুলোতে গ্রাহকদের যে পরিমাণ টাকা থাকার কথা বাস্তবে তার চেয়ে ৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম আছে। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠেছে এই টাকা গেল কোথায়? এই টাকা চলে গেছে অভিযোগ উঠা ব্রোকারহাউজের মালিকদের নিজেদের নিয়ন্ত্রনে।ডিএসইর নির্দেশে ব্রোকারহাউজগুলোর পাঠানো হিসাব থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে অ্যাপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে। ঘাটতির পরিমাণ ২১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গ্রাহকদের এই পরিমাণ টাকা তারা অন্য হিসাবে সরিয়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘাটতি সিনহা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিনহা সিউরিটিজে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজে, ঘাটতির পরিমাণ ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা।
এর পরেই ঘাটতি আছে এক্সপো ট্রেডার্স নামের ব্রোকারহাউজে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা । শীর্ষ পাঁচ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা সাদ সিকিউরিটিজে ঘাটতির পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বাকী ১০ ব্রোকারহাউজে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘাটতি আছে। এই ব্রোকারহাউজগুলোর মধ্যে আছে- ল্যাব এইড গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিরর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ডোরিন গ্রুপের মালিকানাধীন ব্রোকারহাউজ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী অ্যান্ড কোং, ফারইস্ট স্টক এন্ড বন্ডস, এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, এসিই ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস, হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজ ও গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্সেস লিমিটেড।
সম্প্রতি শেয়ারবাজারের আলোচিত ঘটনা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের কেলেঙ্কারির পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবের (Consolidated Accounts) তথ্য দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। তাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে গতকাল বুধবার (৮ জুলাই) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পষর্দের বৈঠকে ম্যানেজমেন্ট যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে তাতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ব্রোকারহাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবারের বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক-সবাই একমত হয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন ডিএসইর একাধিক পরিচালক। তবে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মতো আর যাতে একটি ঘটনাও না ঘটে এবং যে কোনো মূল্যে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
এবিষয়ে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান অনেক বেশি সোচ্চার ছিলেন বলে জানা গেছে।পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ শাকিল রিজভী এবং অপর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মোহাম্মদ শাজাহান তাকে সমর্থন দেন। এমনকি স্বতন্ত্র পরিচালকরাও ব্রোকারহাউজসহ পুঁজিবাজারের সব ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি রোধ, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ডিএসইর ম্যানেজমেন্ট অবিলম্বে আলোচিত ব্রোকারহাউজগুলোকে গ্রাহকদের টাকা সমন্বিত হিসাবে ফিরিয়ে দিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা না হলে বিদ্যমান আইনে ডিএসই খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ডিএসই আগে থেকে ব্রোকারহাউজগুলো নিয়মিত পরিদর্শন (Inspection) করলে হয়তো ব্রোকারহাউজগুলো গ্রাহকদের এত টাকা সরাতে পারতো না। পাশাপাশি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের আগেও শাহ মোহাম্মদ সগীরসহ যে কেলেঙ্কারিগুলো হয়েছে, সেগুলো এড়ানো যেত। তবে আগে যা-ই হোক, বর্তমানে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে অনেক কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।