অবশ্য গত ২ জুলাই অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের আগের বৈঠকে ট্রেকের নিবন্ধন ফি ২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ কর্তৃক গ্রাহকদের টাকা আত্মসাত এবং বেশ কিছু ব্রোকারহাউজে গ্রাহকদের সমন্বিত (Consolidated) হিসাবে টাকার ঘাটতি চিহ্নিত হওয়ায় আগের বৈঠকে আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আলোচনার পর স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা ট্রেকের মূল্য ৫ কোটি টাকা নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছান। ট্রেক সংক্রান্ত অন্যান্য সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় সর্বসম্মতভাবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সচিব ও ডিএসইসির চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের নেতৃত্বে প্রত্যেক স্বতন্ত্র পরিচালকই ট্রেক ইস্যুসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে যথেষ্ট জোরালো ভূমিকা রাখেন। আর এসব সিদ্ধান্তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা।
বৈঠকে সবাই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী ও ট্রেকের গ্রাহকদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এর প্রেক্ষিতে ট্রেকের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের সীমা এবং ডিএসইতে তাদের জামানতের পরিমাণও বাড়ানো হয়। সিদ্ধান্ত হয়, আর্থিকভাবে অনেক সক্ষম ও ভাল ভাবমূর্তির প্রতিষ্ঠানকেই কেবল ট্রেক দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষার জন্যে ট্রেকের মালিকের আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর প্রতিটি আবেদন যথেষ্ট সতর্কতার সাথে যাচাইবাছাই করা হবে, যাতে কোনো দুষ্ট লোক ট্রেক নিয়ে বাজারে কোনো কেলেঙ্কারির জন্ম না দিতে পারে।
আগামী ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠানো হবে।
আজকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, আর ট্রেক কিনতে আগ্রহী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হতে হবে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। পাশাপাশি জামানত হিসেবে ডিএসইতে ৫ কোটি টাকা জমা রাখতে হবে। এই জামানতের টাকা থেকে সুদ বাবদ যে অর্থ আয় হবে, তা ডিএসইসির তহবিলে যাবে। ট্রেকের জন্য আবেদন করতে চাইলে আবেদনপত্র কিনতে হবে ১০ লাখ টাকায়।
উল্লেখ, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন তথা মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা সংক্রান্ত আইনে ট্রেক ইস্যুর বাধ্যবাধকতা আছে। এর প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ ডিএসইর সম্মতি নিয়ে ট্রেক সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছিল বিএসইসি। এতে ট্রেক পেতে ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি ও ১ লাখ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন ও ২ কোটি টাকা জামানতের কথা বলা হয়েছিল তাতে।
ডিএসইর মতামত নিয়ে ওই খসড়া প্রকাশ করা হলেও বিষয়টি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে ডিএসইকে লিগ্যাল নোটিশ দেয় ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ট্রেক ইস্যুর ব্যাপারে কিছুটা পিছটান দেয় বিএসইসি। করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিএসইসির কমিশন বৈঠকে ট্রেক ইস্যু বিধিমালার খসড়ার বিষয়ে নতুন করে জনমত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে আইনটির বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় বিএসইসি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ডিএসই মতামত পাঠানোর জন্য আজ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়। এই সিদ্ধান্তে সব স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক একমত। আর সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরে তারা আনন্দিত বলে জানা গেছে।