সরকারি যানবাহন ক্রয় ছয় মাসের জন্য স্থগিত

সরকারি যানবাহন ক্রয় ছয় মাসের জন্য স্থগিত
নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষত কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী ছয় মাস (ডিসেম্বর পর্যন্ত) সব ধরনের সরকারি যানবাহন ক্রয় স্থগিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

গত বুধবার জারি করা এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ্র সাধন নীতির আলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহফুজুল আলম খান স্বাক্ষরিত পরিপত্রের অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জারি করা এক নির্দেশনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় কমাতে অস্থাবর সম্পদ ক্রয়, অফিস স্পেস ভাড়া ও সাজসজ্জা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি কর্মচারীদের ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, আপ্যায়ন খরচ, স্টেশনারি ও উন্নয়ন ফান্ডসহ বিভিন্ন খরচে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া বার্ষিক ক্যালেন্ডার, ডায়েরি মুদ্রণ বা এ-জাতীয় প্রচারণামূলক ব্যয়ে অর্থ বরাদ্দ সীমিত করে আনার নির্দেশনাও দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সংকট মোকাবেলায় কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি গ্রহণ করছে সরকার। কোন কোন খাতে আরো ব্যয় কমানো যেতে পারে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ব্যয় সামলাতে এসব কৃচ্ছ্র সাধন অর্থনীতিতে ভিন্ন মাত্রা জোগাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় দুই ভাগে বিভাজন করে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় বা পরিচালন ব্যয়ের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তাকে বলা হয় রাজস্ব বরাদ্দ। আর উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তাকে বলা হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অর্থ ব্যয়কে পরিচালন ব্যয় বলা হয়। আর উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ব্যয় হলো উন্নয়ন ব্যয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালন ব্যয় বা রাজস্ব বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে অনেক সময় স্থায়ীভাবে গাড়ি কেনে। আবার অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়ও গাড়ি কেনা হয়। প্রকল্পগুলোতে গাড়ি কেনা বাবদ অনেক অর্থ ব্যয়ের সংস্থান থাকে। কিন্তু প্রকল্প শেষে ওই গাড়ির প্রয়োজনীয়তা থাকে না। আবার গাড়ি কেনার চেয়ে এর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি বাবদ খরচ হয় অনেক বেশি। এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া যায়। সেজন্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গাড়ি কেনার পরিবর্তে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এখন যেহেতু আগামী ছয় মাস গাড়ি কেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাতে সরকারের ব্যয় অনেক সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত ৮ জুলাই প্রকাশিত আরেকটি পরিপত্রে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন এডিপির আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যয় না করলেই নয়, এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।

পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর ‘উচ্চ’, ‘মধ্যম’ ও ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেসবের মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থাগুলো উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলো যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।

মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে; মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থাগুলো স্বীয় বিবেচনায় সেসব খাতে অর্থ ব্যয় করবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় পরিহার করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে।

তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে। প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
গ্রাহক সংখ্যায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান নগদ
বছরজুড়ে আলোচনায় খেলাপি ঋণ, সুদহার ও বিনিময়হার
প্রথম দিনেই ২ লাখের বেশি পণ্যের অর্ডার পেলো ইভ্যালি
তিন মাসের মধ্যে সব দেনা পরিশোধ শুরু করবো
পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার না বানানোর অনুরোধ
এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ