রেস্তোরাঁগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এরই মধ্যে ক্রেতাস্বল্পতায় কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের আউটলেট বন্ধ রেখেছে। ঈদের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে লোকসানি আউটলেটগুলো বন্ধ করে দেবে এমন সিদ্ধান্তও নিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
রাজধানীর আরেকটি বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট জিনজিয়ান। প্রতিষ্ঠানটির ১১টি আউটলেট থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে তিন মাস ধরে সব আউটলেট বন্ধ রয়েছে। দেশে বিদেশী পর্যটক না আসা, করোনা ভীতিসহ নানা কারণে কাস্টমার যান না সেখানে। জিনজিয়ান রেস্তোরাঁর অ্যাডমিন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, করোনা মহামারীতে আমাদের ১১টি আউটলেটের সব বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল তো রয়েছেই। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
করোনার প্রভাবে রাজধানীর গুলশান-২-এ অবস্থিত নান্দুস রেস্তোরাঁয়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে রেস্তোরাঁর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সব কর্মচারীর জন্য বাধ্যতামূলক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড শিল্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতিরিক্ত খরচ হলেও ক্রেতার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি আমরা। এমনকি কাস্টমারদের নিরাপত্তার স্বার্থে রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ অনলাইনে চলছে বেচাকেনা, যে কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ কাস্টমার কমেছে। তিন মাস আগে প্রতিটি আউটলেটে ২৪ ঘণ্টায় ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। একই অবস্থা এখন বার্গার কিং রেস্তোরাঁতে। রাজধানীতে এ প্রতিষ্ঠানের ১২টি আউটলেট থাকলেও কাস্টমার সংকটে সাতটি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বিক্রি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। আগে প্রতিটি আউটলেটে একদিনে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হলেও এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা।
এদিকে পিৎজা হাট প্রতিষ্ঠানটির ২৪টি আউটলেট থাকলে করোনার কারণে বন্ধ আছে নয়টি আউটলেট। খাবার বিক্রি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তাদের কর্মচারীদের প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে গেছে। একই অবস্থা বিএফসি’র। পুঁজির স্বল্পতা ও করোনা সংকটে রাজধানীজুড়ে ১৮টি আউটলেট থাকলেও বর্তমানে চালু আছে ১২টি।
বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এমন বিদেশী রেস্তোরাঁগুলোর আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বাংলাদেশে ছোট বা বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার হোটেল ও রেস্তোরাঁ হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হতো। মালিক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী এ কাজে জড়িত। তবে করোনার মহামারীতে গত দুই মাস এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল।
গত মাস থেকে সীমিত পরিসরে চালু হলেও সারা দেশে এখনো ৮৫ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে এ খাতে ২০ শতাংশ কর্মচারী কাজ হারিয়েছে। দক্ষতা থাকলেও হঠাৎ বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। পরিস্থিতি এমন থাকলে আরো ৬০ শতাংশ কর্মী বেকার হবেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্যে জানা গেছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা রাখতে দিচ্ছে না। গত ২৮ জুন আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষ থেকে পুরো সময় ধরে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে সমিতির নেতারা সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবিও তুলে ধরেন।
এদিকে করোনার এমন মহামারীর মধ্যেও ধীরে ধীরে রাজধানীর ছোট-বড় অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট খুলেছে। যদিও আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই। হাতেগোনা কয়েকজন কাস্টমার ও কিছু পার্সেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে অধিকাংশ রেস্তোরাঁর কর্মকাণ্ড। বাকি সময় কর্মচারীদের অনেকটা অবসর কাটছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব এম রেজাউল করিম সরকার রবিন বলেন, করোনার কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে রেস্তোরাঁ ব্যবস্থায়। লকডাউন ও সাধারণ ছুটির কারণে এ খাতে প্রায় ৬০ হাজার কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে ব্যবসা বন্ধ থাকলেও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য বিল ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে মালিকদের। এ পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রণোদনা দিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি।