বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে গত প্রান্তিকে বার্ষিক ৪১ দশমিক ২ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছে এশিয়ার ‘বিজনেস হাব’ সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এটিই তাদের জিডিপিতে সবচেয়ে বড় সংকোচন। এছাড়া ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার পর কখনো পতন দেখেনি সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি।
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশে আরোপিত দীর্ঘ লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক বাণিজ্য। এতে রফতানিনির্ভর সিঙ্গাপুরের শিল্প খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আংশিক লকডাউন আরোপের কারণে গত প্রান্তিকে বিক্রিতে রেকর্ড পতন দেখেছেন দেশীয় রিটেইলাররা। এ সবকিছুই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে এসেছে।
গতকাল শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশ্য এ সময়ে ওষুধ উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে আগের প্রান্তিকের সঙ্গে হিসাব করলে তা সংকুচিত হয়েছে বার্ষিক ২৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে। প্রথম প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
নভেল করোনাভাইরাস দেশটির অর্থনীতিতে কতটা বাজে প্রভাব ফেলেছে, তা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমেছিল বছরওয়ারি ২ দশমিক ২ শতাংশ। আর গত বছরের শেষ প্রান্তিকের চেয়ে সংকুচিত হয়েছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুরে নির্মাণ খাতের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল বলা যায়। আলোচ্য সময়ে প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এ খাতে সংকোচন হয়েছে ৯৫ দশমিক ৬ শতাংশ, বছরওয়ারি হিসাবে যা ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে সেবা খাত সংকুচিত হয়েছে বছরওয়ারি ১৩ দশমিক ৬ আর প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এর আগে সিঙ্গাপুর সরকার এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, পুরো বছরে ৪ থেকে ৭ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে দেশটির অর্থনীতি। তবে মঙ্গলবারের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় নতুন করে কোনো পূর্বাভাস দেয়নি তারা।
করোনা মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব এশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিগুলোর তুলনায় সিঙ্গাপুরের ওপরই বেশি পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। এখন পর্যন্ত খুব কম দেশই তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে জাপানে আলোচ্য সময়ে প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২০ শতাংশ সংকোচন দেখা গেছে। এদিকে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের যেসব তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে বলেই দেয়া যায় যে দেশটির অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে চলেছে।
সিঙ্গাপুর সরকার লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু করেছে গত ১ জুন থেকে। আর নগররাষ্ট্রটি অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে ১৯ জুন। এর মাধ্যমে অধিকাংশ দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ তাদের ব্যবসা চালুর সুযোগ পেয়েছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুরের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চ্যান চুন সিং। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘সামনের মাসগুলোয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথটি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। বৈদেশিক চাহিদায় মন্দা ভাব এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন দেশে মহামারীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় জোয়ার সামাল দিতে সরকারগুলোকে ফের কঠোর লকডাউনে যেতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা ধারণা করছি, উত্তরণের গতি হবে মন্থর ও অমসৃণ।’
সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক মন্দার এ চিত্র সদ্যই নির্বাচনে জয়লাভ করা ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টিকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। কারণ গত সপ্তাহের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলেও তাদের জনসমর্থন ৫৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে তলানিতে নেমে এসেছে।
অবশ্য সরকার এরই মধ্যে সংকটে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য ৯ হাজার ৩০০ কোটি সিঙ্গাপুর ডলারের (৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ।
সুত্র: ব্লুমবার্গ ও বিবিসি।