প্রক্রিয়াটি মূলত বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করার একটি সংক্ষিপ্ত পথ সৃষ্টি করবে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে সড়কপথে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কী ধরনের জটিলতা আসতে পারে তা এ ট্রায়াল রানের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, এমভি সেঁজুতি আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়বে। বার্থ খালি থাকা সাপেক্ষে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ভেড়ানো হবে এটি। পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরু হওয়ার ফলে বাংলাদেশ হয়ে নৌ, সড়ক ও একাধিক পথে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে কম সময়ে ও কম খরচে পণ্য পাঠাতে পারবে ভারত। পরীক্ষামূলক চালানটিতে পণ্য পরিবহন বাবদ চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের পাশাপাশি বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহারের জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নির্ধারিত মাশুল আদায় করবে।
কাস্টমসের তথ্যমতে, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এ সাতটি হলো প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাশুল প্রযোজ্য হবে। এ নির্ধারিত সাতটি মাশুল বাবদ বাংলাদেশ কনটেইনার প্রতি ৫৫ ডলার পর্যন্ত পাবে। এর সঙ্গে আলাদাভাবে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম এটি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এ ট্রায়াল রান উপলক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বন্দরে এখন কোনো জট না থাকায় পণ্য ওঠা-নামা কার্যক্রমও দ্রুত হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের নির্ধারিত ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী বন্দরের চার্জগুলো আদায় করা হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান বার্থিং নীতিমালা (আগে এলে আগে ভেড়ার অনুমতি) অনুযায়ী ট্রানজিট কার্গোবাহী জাহাজকে বার্থ করা হবে। ট্রানজিট চুক্তির আওতায় পণ্য পরিবহন পুরোদমে শুরু হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা সূচিত হবে।’
উল্লেখ্য, সাধারণত সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কলকাতা থেকে সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পৌঁছতে সময় লাগে এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময়। নতুন এ রুটে দুই দিনের মধ্যে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর সড়কপথে দ্রুত পৌঁছবে আগরতলা সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা।
এমভি সেঁজুতির শিপিং এজেন্ট ম্যাংগো লাইন লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ‘ট্রান্সশিপমেন্টের চারটি কনটেইনারের মধ্যে দুটিতে রয়েছে টাটা স্টিল উৎপাদিত টিএমটি স্টিল বার এবং বাকি দুটিতে রয়েছে ইটিসি এগ্রো প্রসেসিংয়ের মসুর ডাল। চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেলারে করে ভারতের আগরতলার উদ্দেশে রওনা হবে। আগরতলা থেকে খালাসের পর রডের চালান নেয়া হবে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। চালানটি ভারতের এসএম করপোরেশনের। অপরদিকে আগরতলায় ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বা আইসিপিতে খালাস করে ডালের চালান ভারতীয় ট্রাকে করে আসামের করিমগঞ্জে জেইন ট্রেডার্সের কাছে নেয়া হবে।
‘এমভি সেঁজুতি’ জাহাজের এজেন্ট ম্যাঙ্গো লাইন শিপিংয়ের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরা ও আসাম যাবে পণ্যবাহী জাহাজটি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে চালান দুটির শেষ গন্তব্য ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে। জাহাজটি ট্রান্সশিপমেন্টের চারটি কনটেইনার নিয়ে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারগুলো নামানোর পর চট্টগ্রাম কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থলপথে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় যাবে এবং সেখান থেকে ত্রিপুরায় যাবে। চারটি কনটেইনারের মধ্যে দুটি স্টিল কারখানার টিএমটি বার বোঝাই এবং দুটি কনটেইনার ডালবোঝাই।’
এর আগে গত জানুয়ারিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনের ট্রায়াল রান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নভেল করোনাভাইরাস ও অন্যান্য জটিলতায় তা তখন শুরু করা যায়নি।