বিলস চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান সিরাজের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব নজরুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএলও জেনেভার এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা ড. রিজওয়ানুল ইসলাম। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো পৌতিয়াইনিন। সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার এমপি, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ড. রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯, করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সংকট এখন অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এ অর্থনৈতিক সংকট জীবিকা সংকটে রূপান্তরিত হয়ে দ্রুত শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। যারা শহর অঞ্চলে কাজ করেন, সেই শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক তাদের জীবিকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি যোগ করেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, উৎপাদন হ্রাস, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং চাহিদাও হ্রাস পাবে, যা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রফতানিমুখী শিল্প ও প্রবাসী শ্রমবাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থান আরো হ্রাস পেতে পারে। দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল এক কোটির উপর শ্রমিক তাদের কাজ হারাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব মিলিয়ে দুই কোটির উপর শ্রমিক তাদের কাজ হারাবেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো পৌতিয়াইনিন বলেন, কভিড-১৯-এর প্রভাবে গ্লোবাল সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়ে শ্রমবাজারের যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বিনির্মাণে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রফতানিমুখী শিল্পের দিকে লক্ষ রেখে ভবিষ্যতের শ্রমবাজারকে পুনর্গঠন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শ্রমবাজারের সর্বশেষ ও সঠিক তথ্য সংবলিত ডাটা ব্যাংক। তিনি বলেন, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতের পাশাপাশি শ্রমিক, মালিকপক্ষ ও সরকারের সমন্বয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
বিআইডিএসের সিনিয়র ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ব্র্যান্ড বায়ারদের বিলম্বিত মূল্য পরিশোধের কারণে কিছু কিছু তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটি শ্রমিকের বেতন বা চাকরি ছাঁটাইয়ের বড় কারণ হতে পারে না। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিকাশ, রকেট ইত্যাদি ব্যবহার করে স্বল্প মাত্রার ঋণ দেয়া যায় কিনা সেটি সরকার বিবেচনায় রাখতে পারেন। ঋণ পেলে অনেক ক্ষুদ্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারে। যারা চাকরি হারাচ্ছেন তাদের মধ্যে নারী গৃহশ্রমিকের একটি বড় সংখ্যা রয়েছে। এদের দক্ষতা উল্লেখপূর্বক তালিকা তৈরি করা দরকার। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি পুঁজিরও ব্যবস্থা করতে হবে।
বিজিএমইএ পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, বিজিএমইএকে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। সেই অর্থে মার্চের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিয়েছিল, তা দুই মাসের বেতন দিয়ে শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, সেটি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করতে পারেনি বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেতন প্রদানে ব্যত্যয় ঘটেছে। এপ্রিল থেকে জুনের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ২৪ লাখ শ্রমিককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত আলোচনায় অংশ নিলেও নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সুনির্দিষ্ট ফলোআপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে আমাদের চ্যালেঞ্জটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোনো মালিকই সজ্ঞানে চাকরি থেকে শ্রমিককে ছাঁটাই করতে চান না। পরিস্থিতির কারণেই তারা বাধ্য হন বলে মন্তব্য করেন। তিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে দক্ষতা উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানে মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কাজ হারানোর দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে কেএম আজম খসরু বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আগে বাঁচাতে হবে মানুষের প্রাণ। দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে শ্রম খাত পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ড. জাকির হোসেন বলেন, সব ক্ষেত্রেই কর্মহীনতার প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ধরে রাখা জরুরি।