চিঠিতে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন ও সরেজমিন পরিদর্শন ব্যতীত কভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতি কীভাবে দেয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
চিঠির বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে র্যাবের অভিযান এবং কভিড-১৯ সেবায় অনিয়ম, অবহেলা ও প্রতারণা অভিযোগ সংক্রান্ত।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, রাজধানীর গুলশানে বেসরকারি সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুলাই র্যাবের পরিচালিত অভিযানে অনুমতি ছাড়াই করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এবং পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সরেজমিন পরিদর্শন ব্যতীত সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজসহ আরো চারটি বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রস্তুতির আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল বলে র্যাবের অভিযান পরিচালনা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জানান। পরীক্ষার অনুমতি স্থগিত করা হলেও সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ বেআইনিভাবে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করছিল। হাসপাতালটি বাইরে থেকে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে প্রতিবেদন দিচ্ছিল। বাইরে থেকে নমুনা পরীক্ষা করে এনে ফলাফল দেয়া বেআইনি।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
গত রোববার করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালান। অভিযানকালে হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা আবুল হাসনাত ও শাহরিজ কবিরকে আটক করা হয়। পরদিন গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির এমডি ফয়সাল আল ইসলামকে আটক করে এবং পরে এ তিনজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় অনুমোদনহীন র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো, পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন, করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, ভিন্ন ল্যাব থেকে কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটির লাইসেন্স এক বছর আগে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তা নবায়ন করা হয়নি।
এদিকে জেকেজি হেলথকেয়ারের কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। এর মধ্যে ডা. আবুল কালাম আজাদ এরই মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
ডিবি জানায়, জেকেজি হেলথকেয়ারের কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে কিছু অনিয়মের তথ্য প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরী, তার স্ত্রী ড. সাবরিনা আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য এসেছে। এসব তথ্য যাচাই করতে গতকাল বেলা ৪টার দিকে ডিবির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেলের নেতৃত্বে একটি টিম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যান। সেখানে অধিদপ্তরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, জেকেজি হেলথকেয়ারকে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের ডাকা হলে ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট টিম সেখানে যান। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পর অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।