তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ‘আক্রমণাত্মক, অসংবেদনশীল, অশোভনীয় ও কুরুচিপূর্ণ’ভাষায় বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানবাধিকার সংগঠক, শিক্ষক, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) তারা গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে সুলতানা কামালের সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা সর্বজনবিদিত। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক জন হামফ্রি ফ্রিডম এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন।
সুলতানা কামালের বিরুদ্ধে জনাব রুহুল কবির রিজভীর এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী এবং ব্যক্তির মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুলতানা কামাল সাধারণ জনগণের অধিকারের পক্ষে আজীবন কাজ করেছেন। তাকে আওয়ামী অধিকার কর্মী বলে অভিযোগ করা অনভিপ্রেত এবং এর মাধ্যমে মানবাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিএনপির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। পাশাপাশি তাকে ছোট করার হীন প্রয়াস বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবিরের মতো বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্যও অশোভনীয়, অগ্রহণযোগ্য ও চরম নিন্দনীয়।
২ অক্টোবর ইন্ডিয়া টুডে’র সাক্ষাতকারের বিষয়ে বলা হয়, সুলতানা কামাল তার সাক্ষাৎকারে কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য উদ্ঘাটন করায় রুহুল কবির রিজভী যেভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার মাধ্যমে তিনি এবং তার দলের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তার বক্তব্য প্রকারান্তরে মানবাধিকার আন্দোলনকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা হিসেবে প্রতীয়মান হয় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
এ ধরনের অন্যায় অগ্রহণযোগ্য এবং রিজভীর অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতি তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন বিবৃতিদাতারা।
যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা হলেন- অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান হুমায়ূন কবীর, শামসুল হুদা, অধ্যাপক মিসবাহ কামাল, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সঞ্জীব দ্রং, রবীন্দ্র সরেন, পল্লব চাকমা, সানায়া আনসারী, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, মোতাহার হোসেন আকন্দ, খুশি কবীর, জিনাত আরা হক, বেগম রোকেয়া, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ, তাপস কুমার দাস, অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল এবং ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল।
বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য জোট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, যখন ভোলায় যশোরে মুন্সিগঞ্জে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির যুবদলের কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে তখন আপনি (সুলতানা কামাল) কোথায় ছিলেন? আপনারা ওটার প্রতিবাদ করলেন না আপনারা কিসের মানবাধিকার কর্মী।
সুলতানা কামালকে উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, আপনারা আওয়ামী অধিকার কর্মী। আপনি আওয়ামী লীগের স্বার্থের যে অধিকার সেই অধিকারের কর্মী। এদেশের জনগণের যে অধিকার সেটা আপনার মধ্যে নেই। আপনার মাথার মধ্যে নেই। আপনি চান আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ ক্ষমতায় থাকুক। আপনি চান ওরা আওয়ামী লীগ যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে, গুম করেছে- এটা চালু থাক। এটা সুলতানা কামালরা চান। তাই নিজ দেশে না অন্য দেশে সাক্ষাৎকার দিয়ে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। সুলতানা কামালের সেই বক্তব্য আমি ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাই।
রিজভী বলেন, আরেকজন বুদ্ধিজীবী মুনতাসির মামুন বলেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এদেশের অনেকেই দেশে থাকতে পারবে না। কেন থাকতে পারবে না? জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন আপনি চাকরি করেননি? বেগম জিয়ার ক্ষমতার সময় আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আপনি কোথায় পালিয়ে গিয়েছিলেন? বরং আপনি দেশবিরোধী কাজ করেছেন। আপনি এবং আপনার বন্ধু শাহরিয়ার কবির বিদেশে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কলঙ্ক রটিয়েছেন।