কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গসহ ভ্রমণকারীদের চিহ্নিত, পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেফার করার জন্য পিওই কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক এই সংস্থা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, আখাউড়া, বেনাপোল এবং দর্শনা স্থল বন্দর এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেইলওয়ে স্টেশন- এই আটটি বন্দরে মূলত সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাহায্য করছে সংস্থাটি। কর্মসূচির আওতায় আইওএম ইতোমধ্যে বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বিতরণ, বন্দরসমূহে ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিওর (এসওপি) তৈরিতে কারিগরি সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।
এ বছরের মার্চ মাস থেকে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় আইওএম আটটি বন্দরে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ‘জরুরি চাহিদা মূল্যায়ন’ পরিচালনা ও সম্পন্ন করে। একইসাথে আটটি পিওই টাস্কফোর্স মিটিং ও হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দুইটি সংকট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত মিটিং আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক আভিবাসন সংস্থা কোভিড-১৯ মোকবেলায় যোগাযোগ সহজতর করার পাশাপাশি উন্নত উপাত্ত এবং তথ্য পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের জরুরী রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিটকে সরঞ্জাম সহায়তা প্রদান করে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে, আটটি বন্দরে পিপিই এবং অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করে, বিমান বন্দরসমূহে ভ্রমণকারীদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুইটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিওর (এসওপি) তৈরিতে সরকারকে সহায়তা করে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেইলওয়ে স্টেশন এবং হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডেস্ক এবং বুথ স্থাপন করে। এছাড়াও ৩৫২ জন প্রথম সারির কর্মীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মেডিকেল সহায়তার জন্য কর্মী নিয়োগ, নয় লাখ স্বাস্থ্যবিষয়ক ঘোষণাপত্র, ৫০ হাজারটি যাত্রীর অবস্থান নির্ণয়কারী ফর্ম এবং এক লাখ অন্যান্য স্ক্রিনিং ফর্ম বিতরণ করে আইওএম।
সহযোগিতা কর্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৩ জুলাই, আইওএম দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা (হেলথ স্ক্রিনিং ডেস্ক) প্রদান করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মী কর্তৃক পরিচালিত এসকল ‘হেলথ স্ক্রিনিং ডেস্ক’-এ দেশে আসা এবং বহির্গামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ থেকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ঘোষণাপত্র ফর্ম সংগ্রহ করা ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় কর্মরত কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিমানবন্দরে সুরক্ষামূলক স্ক্রিনযুক্ত এই আংশিক-স্থায়ী স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং সুবিধাগুলি স্থাপন করা হয়েছে। এই স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং ডেস্কগুলো ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। এখানে যাত্রীদের পরীক্ষা করার পাশাপাশি লক্ষণ চিহ্নিতকরণ, কোয়ারেন্টাইনের গুরুত্ব এবং কখন ও কিভাবে চিকিৎসা নিতে হবে সেই বিষয়ে যাত্রীদের তথ্য প্রদান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২৮ টি বন্দর রয়েছে। এই স্থল, সমুদ্র এবং বিমান বন্দরগুলো সংক্রামক রোগের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে। দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এইসকল বন্দরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ভ্রমণকারীদের চিহ্নিত করা জরুরি। কোভিড-১৯ উপসর্গসহ যাত্রীদের চিহ্নিতকরণ এবং পরবর্তী পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনের জন্য রেফার ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এই রোগের সংক্রমণকে উৎসেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতীয় কর্তৃপক্ষ বহিরাগত ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে অন্যান্য দেশেও সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে সক্ষম হবে।
মানবিক সীমান্ত পরিচালনার দিকনির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইওএম, পিওই-এর মাধ্যমে এই রোগের বিস্তারজনিত ঝুঁকি রোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সক্ষমতা জোরদার করার জন্য সমন্বয়মূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব করে। সুপারিশকৃত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ সুবিধা স্থাপন, ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সম্মুখভাগে কাজ করা কর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) বিধান, পিওই সমূহে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থার কঠোর প্রয়োগ, ভ্রমণকারী এবং পিওই কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কিত সরকারি নির্দেশমালা পালন এবং পিওই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ।
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য মানুষ নয়, বরং ভাইরাসই বড় হুমকি। বন্দরসমূহে অতিক্রমের সময় উপসর্গযুক্ত ভ্রমণকারীদের চিহ্নিতকরণে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে বাংলাদেশের বহির্গামী ও প্রত্যাবর্তনকারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাহায্য করছি। আমরা অবকাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং সম্মুখভাগে কাজ করা কর্মীদের জন্য পিপিই প্রদান করছি। একইসাথে এই ভাইরাস কীভাবে সংক্রমণিত হয় এবং কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সে সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী সাড়াপ্রদান নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি আমরা।”
বিমান বন্দরসমূহের বিদ্যমান প্রক্রিয়ার মধ্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট এর সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে আইওএম। বিমানবন্দরগুলিতে বাস্তবায়িত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যবস্থা বিমান ভ্রমণে জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনার সরকারের উদ্যোগের একটি অংশ। আইওএম-এর ধারণা, এই বছরের মধ্যে লাখ লাখ অভিবাসী কর্মী দেশে ফিরে আসতে পারে। এখন পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আগত ফ্লাইট সংখ্যা সীমিত। আইওএম বাংলাদেশ সরকারি কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভ্রমণ সময়তালিকায় ফেরত যেতে এবং তার ফলস্বরূপ হেলথ ডেস্কে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ভ্রমণকারীর সংখ্যার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করছে।
আগামী মাসগুলিতে, আইওএম অন্যান্য বন্দরসমূহে সহায়তার পরিসর বৃদ্ধি করবে। একইসাথে গতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য রক্ষায় অভিবাসী কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহায়তা প্রদানে কাজ করে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।