শিল্প সচিব চামড়া খাতকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে বলেন, চামড়া শিল্পকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে আমরা যে স্বপ্ন দেখছি ২০২১ সালের মধ্যে সেই স্বপ্নপূরণ করার লক্ষ্যে চামড়া শিল্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। সেই বিবেচনায় আমরা চামড়া খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করি।
চামড়া খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই চামড়া শিল্প নগরীর ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি উল্লেখ করে সচিব বলেন, আগামীতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং সবার সহযোগিতায় চামড়া শিল্প নগরী এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত করে আরো ব্যাপকহারে আমরা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে পৃথিবির বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করে আমাদের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সক্ষম হবে।
সরকারের এ কর্মকর্তা জানান, কোনো কোনো জায়গায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার ন্যায্য মূল্য পায়নি বলে যে অভিযোগে এসেছে তার জন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি পরিক্ষা-নিরীক্ষা করছি। যদি কোথাও কোন অপূর্ণতা থেকে থাকে আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নিতে চাই বলে জানিয়েছে। রবিবার দুপুরে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় অবস্থিত চামড়া শিল্প নগরীরর সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব বলেন।
চামড়া রপ্তানির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্প সচিব বলেন, মুলত কেস-টু-কেস পদ্ধতিতে চামড়া রপ্তানির সুযোগ পাবেন চামড়া ব্যবসায়ী। অর্থাৎ প্রথমে ব্যবসায়ীদের আবেদন করতে হবে। পরে কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে রপ্তানির অনুমোদন পাবে সেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী।
এই প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে এই সময়ের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে আরো যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানেরও আশ্বাস দেন শিল্প সচিব কে এম আলী আজম।
অন্যদিকে চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন শেষে বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বলেন, চামড়া নগরীতে সলিড বা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এবারও স্থায়ী সমাধান হয়নি, তবে আগামী ৩ মাসের মধ্যে আধুনিক ও স্থায়ীভাবে চামড়ার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে ‘‘সিইটিপি’’ বর্জ্য পরিশোধনের পর যে পানি বের হয়, তাতে পরিবেশের স্ট্যান্ডার্ড যে মাত্রা থাকার কথা তা গত ৬ মাস ধরে ঠিক রয়েছে। তবু পরিশোধনের পর পানির রংটা এখনও নদীর পানির মতো না হওয়ায় পরিশোধিত পানি যাতে করে নদীর পানি মতো হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
ট্যানারি পরিদর্শনের সময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অক্তিরিক্ত সচিব (বিসিক) কাজী শাখাওয়াত হোসেন, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নীপা, চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জিতেন্দ্র নাথ পাল প্রমুখ।
সরেজমিনে রবিবার সাভারের হরিণধরা এলাকায় অবস্থিত চামড়া শিল্প নগরীতে ঈদের ২য় দিনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানীর পশুর কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
করোনা ও বন্যার কারণে বিগত বছরের তুলনায় এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহে কিছুটা সংকট রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন শিল্প নগরীরর বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ট্যানারি কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কাঁচা চামড়াগুলোতে লবণ মাখিয়ে রাখা হচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলে পুরো দমে উৎপাদন শুরু হবে।
তবে ট্যানারি শিল্পে জড়িত-শ্রমিক কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গত কয়েক বছরে ট্যানারির রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এখনও তাদের বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। এ ছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যেও বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ ছাঁটাই কার্যক্রম অব্যাহত রেখে কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।