কাতার বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে ইংল্যান্ড। সোমবার আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যশনাল স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইরানকে নিয়ে ছেলেখেলায় মাতলো দলটি। ৬-২ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। ইংল্যান্ড প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিলো।
১৯৬৬ সালের পর শিরোপার মুখ না দেখা ইংলিশরা গত রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের চৌকাঠ পার হতে পারেনি। তবে এবার তারা যে বেশ আঁটঘাট বেধে নেমেছে তার প্রমাণ দিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি ইরানকে কোন পাত্তাই দেয়নি ইংলিশরা। রীতিমতো উৎসব করে ইরানিদের গোলের মালা পরিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো ইংল্যান্ড।
প্রম মিনিট থেকেই ইরানের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। শুরুর দিকে বল পজেশন ৯০ ভাগেরও বেশি ছিল ইংল্যান্ডের। ফরোয়ার্ডরা গোল মিস করেছেন, বল ক্রসবারে ঠেকেছে। তারপরও বিরতির বাাঁশির সময় এগিয়ে থাকার ব্যবধান ছিল ৩-০।
শুরু থেকে চাপের মধ্যে ছিল ইরান। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা- হিসেবে অষ্টম মিনিটে ইংল্যান্ডের প্রথম আক্রমণ ঠেকাতে নিজেদের ডিফেন্ডার মাজেদ হুসেইনির সঙ্গে সংঘাত ইরান গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানভান্ডের মাথায় গুরতর আঘাত। অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর মাঠে রাখা যায়নি। প্রথম গোলরক্ষক মাঠ ছাড়লে বড় ধাক্কাটা আসে ইরান শিবিরে। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পেরে টপাটপ তিন গোল হজম করে বাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
৮ মিনিটে যে আক্রমণ রুখতে গিয়ে আহত হয়েছেন ইরানের গোলরক্ষক ওই সময়ই এগিয়ে যেতে পারতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ফ্রি-কিক থেকে পাওয়া বল পেয়ে হ্যারি কেইন বক্সে যে ক্রস ফেলেছিলেন সেটা চলে যায় রাহিম স্টার্লিংয়ের মাথার নাগালের মধ্যে দিয়েই। কিন্তু ইংলিশ ফরোয়ার্ড বলে-মাথায় সংযোগ ঘটাতে পারেননি।
২৯ মিনিটে বুকায়ো সাকার বা পায়ের শট গোলরক্ষকের হাতে জমা হলে আরো একটা সুযোগ নষ্ট হয় ইংল্যান্ডের। তিন মিনিট পর হ্যারি ম্যাগুইরের হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে আসলে মাথায় হাত পড়ে হ্যারি কেইনদের। তবে এগিয়ে যেতে আর বেশি সময় নেয়নি গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা। ৩৫ মিনিটে লুক শ’র ক্রসে জুড বেলিংহ্যাম গোল করে লিড এনে দেন ইংল্যান্ডকে।
এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার আরো বেড়ে যায় ইংলিশদের। সারাক্ষণ ইরানের সীমানায় খেলে ইংলিশরা দ্বিতীয় গোল করে ৪৩ মিনিটে। কর্নার থেক ম্যাগুইরের হেড সাকার সামনে গেলে তিনি বাঁ-পায়ে বল পাঠান জালে। প্রধমার্ধের শেষ মিনিটে ব্যবধান ৩-০ করেন রাহিম স্টার্লিং। হ্যারি কেইনের পাস থেকে গোল করেন চেলসির এই ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধারা অব্যাহত ছিল ইংল্যান্ডের। তবে ইরানও কোনঠাসা অবস্থা থেকে একটু উঠে খেলার চেষ্টা করেছে। ইংল্যান্ড ৪-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান ১-৪ করতে পেরেছিল এশিয়ার দেশটি।
৬২ মিনিটে ৪-০ করেছিল ইংল্যান্ড। নিজের দ্বিতীয় গোলটি দারুণ দক্ষতায় করেছেন বুকায়ো সাকা। একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ ছিল। সাকা বক্সের সামনে বল ধরে প্রমে তিনজনকে গতিতে ছিটকে দিয়ে পরে একাধিক ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়েই শট নিয়ে করেন নিজের দ্বিতীয় গোল।
৭২ মিনিটে পঞ্চম গোল বের করে নেয় ইংল্যান্ড। বদলি মার্কাস রাসফোর্ড বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে যে প্লেসিং শট নেন তা গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক গলিয়ে জড়িয়ে যায় জালে।
৯০তম মিনিটে ৬ষ্ঠ গোল করেন বদলি খেলোয়াড় জ্যাক গ্রিসিলিস। কলিন উইলসনের পাস থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত এক শটে ইরানের জালে বল জড়ান গ্রিলিস।
৯৭ তম মিনিটে (৯০+৭ ইনজুরি টাইম) আরেকটি গোল পেতে পারতো ইরান। কিন্তু সরদার আজমাউনের শটটি অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন জর্ডান পিকফোর্ড।
তবে নাটকীয়তা তখনও কমেনি। ইরান একটি ফ্রি-কিক পায়। কিন্তু বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন ইংল্যান্ড খেলোয়াড়রা। যার ফলে ভিএআর দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ইনজুরি সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে শট নেন মেহেদী তারেমি এবং দ্বিতীয় গোল করে ইরান।
জয়টা যখন হাতের মুঠোয় চলে আসে তখন দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের উঠিয়ে নেন ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। সাকা, অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে বিশ্রামে দিয়ে বাকি সময়টা চালিয়ে দেন ইংলিশ কোচ।
বাকি সময়েও একচেটিয়ে দাপট ছিল ইংল্যন্ডের। শেষ পর্যন্ত গোল আর বাড়েনি। দুই দেশের প্রথম সাক্ষাতে ইরানকে ৫-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েই মাঠ ছাড়ে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। ইরানের গোলরক্ষক আলিরেজা বেইরানভান্ডের ইনজুরির কারণে সময় নষ্ট হওয়ায় দুই অর্ধে মোট ২৪ মিনিট ইনজুরি টাইম দেন রেফারিরা। প্রথমার্ধে দেন ১৪ মিনিট, দ্বিতীয়ার্ধে দেন ১০ মিনিট।