ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়াই চলছে দেশের দুই শেয়ারবাজার। এর মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এমডি ছাড়া রয়েছে প্রায় তিন মাস। আর অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদও খালি রয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়মিত এমডি না থাকা শেয়ারবাজারের উন্নয়নের অন্তরায়।
জানা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুক।
ব্যবস্থাপনাকে মালিকানা থেকে পৃথককরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) কার্যকর হয় ২০১৪ সালে। এর পর থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিয়োগ পাওয়া তিন এমডির মধ্যে দুজন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। একই অবস্থা সিএসইতেও। এ প্রতিষ্ঠানটিতেও নিয়োগ পাওয়া তিন এমডির মধ্যে দুজন মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তারিক আমিন ভূঁইয়া। তবে এক বছরের মাথায় চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তারিক আমিন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি তিন বছরের জন্য ডিএসই’র এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে গত ১৩ মাস অতিক্রম করেছি। এ সময়ে আমি ডিএসইতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারিনি, যা করেছি তাতেও নানা আপত্তির মুখে পড়েছি। তাই আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি।’
শুধু তারিক আমিন ভূইয়াঁই নয়, তাঁর আগের এমডি ছিলেন কাজী ছানাউল হক। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য ডিএসই’র এমডি পদে যোগদান করেন কাজী ছানাউল হক। তবে আট মাস না যেতেই ওই বছরের ৮ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পতদ্যাগ করেন।
জানা গেছে, নিয়মিত এমডি না থাকলে পলিসিগত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ ভারপ্রাপ্ত এমডি নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি শুধু রুটিন কাজ করবেন। সুতরাং নিয়মিত এমডি না থাকলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়া নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৯৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় তারিক আমিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, এনআরসি’র (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) সুপারিশ ছাড়াই তিনি পদোন্নতি দিয়েছেন। যদিও চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পাওয়া এক বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে জিএম পর্যায়ের পদোন্নতি স্থগিত করেন তারিক আমিন ভূঁইয়া।
এরপরও একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক ডিএসই’র এমডির বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। তার ভূমিকার কারণে ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ সভায় এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়াকে তোপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি পর্ষদ সভার একটা পর্যায়ে তাকে সভা থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। ফলে এমডির অনুপস্থিতিতে পর্ষদ সভার ওই অংশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, তারিক আমিন ভূঁইয়া পদত্যাগ করার পর সম্প্রতি ডিএসই নতুন এমডি খুঁজতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আগ্রহীদের ৬ নভেম্বরের মধ্যে ডিএসই’র মানবসম্পদ বিভাগীয় প্রধান বরাবর আবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, নিয়মিত এমডি না থাকায় খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না। আমাদের চিফ অপারেটিং অফিসার ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের এমডি ছিলেন। উনার অভিজ্ঞতাও ভালো। তবে এমডি নিয়োগের বিষয়টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা দরখাস্ত আহ্বান করেছি। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চলছে।
শেয়ারবাজারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক না থাকার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, এমডি হিসেবে যিনি রুটিন দায়িত্ব পালন করেন, তিনি দীর্ঘমেয়াদি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। শেয়ারবাজার যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা, সেহেতু একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তাৎক্ষনিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত এমডি এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট সায়েদুর রহমান বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চলতে পারে না। নিয়মিত এমডি না থাকলে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিএসই-সিএসইকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা উচিৎ।