শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর অভিজাত একটি হোটেলে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারীদের পুরস্কার ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। যেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অনুষ্ঠারে সভাপতিত্ব করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আইএমএফ এসেছিল। তারা প্রাণখুলে, মনখুলে বলে গিয়েছে বাংলাদেশের যে অর্জন, যে অগ্রগতি সেটা অসামান্য। এই অর্জনগুলো একে একে হয়নি, শুধুমাত্র সরকারের হাত দিয়েও হয়নি। করদাতের বড় অবদান রয়েছে। আমাদের এগিয়ে যেতে দেশের সব মানুষদের অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে জিডিপির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলার যা প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় ৬৮৬ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৬৬ ডলার। আপনাদের ত্যাগের কারণেই আমরা এ পর্যায়ে এসেছি। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আছে, যারা পিছিয়ে আছে তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন চালু করার পর নানা ঘাত ও প্রতিঘাতের কারণে সেটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ভ্যাট রাজস্ব আদায়ের অন্যতম হাতিয়ার।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত তিন বছরে করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরেক দফা সংকটে আছি। সেদিক থেকে আমরা রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়িনি। ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির মধ্যে আছি। রাজস্বে গত বছরের প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ ছিল, এ বছরও আগের মতোই প্রবৃদ্ধি থাকবে। সামনে উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জকে আমরা সুযোগ হিসেবেও দেখি। এতে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারি, সে কারণেই আমাদের মেইড ইন বাংলাদেশ স্লোগান।
তিনি বলেন, আমরা অটোমেশনের কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা পলিসি সাপোর্টের মাধ্যমে কর প্রক্রিয়া সহজ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে করহার কমিয়ে যাচ্ছি। করহার কমানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করছি। আমরা করনেট যত বৃদ্ধি করতে পারবো, ততই কর হার কমাতে সক্ষম হবো। আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে, সেটা পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রিজকে সহায়তা করে যাওয়া।
অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন, ব্যবসায় ও সেবা ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। উৎপাদন খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড।
ব্যবসা খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান হলো- ওয়ালটন প্লাজা, আগোরা লিমিটেড ও ইউনিমার্ট লিমিটেড এবং সেবা খাতের ৩ প্রতিষ্ঠান হলো বিকাশ লিমিটেড, নগদ লিমিটেড এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড বা আইএফআইসি ব্যাংক।
‘উন্নয়নের ভ্যাট নীতি, ভ্যাট দিয়ে গড়ব জাতি'-এ স্লোগানে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহর ও কমিশনারেট কার্যালয়ে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন হচ্ছে। একইসঙ্গে ১০-১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে এনবিআর।
চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর সপ্তমবারের মতো দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এর আগে প্রতি বছরের ১০ জুলাই জাতীয় ভ্যাট দিবস পালিত হতো। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে মূসক প্রবর্তিত হওয়ার পর এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ২০১১ সাল থেকে দিবস ও সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে।