ট্রেড সাসপেন্ড এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের

ট্রেড সাসপেন্ড এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ এলিগেন্ট স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বেশ কয়েকদিন ধরে শেয়ার লেনদেন করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন না হওয়ার বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সুস্পস্ট কোন তথ্যও দিচ্ছে না ব্রোকারেজ হাউজটি। বিভিন্ন ছলছাতুরিতে বিনিয়োগকারীদের ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি সাংবাদিকদেরও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। এমন অবস্থায় নিজেদের পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন বন্ধ থাকলে সেটি যে কোন প্রতিষ্ঠানের স্পস্ট করা উচিৎ। আর যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক তথ্য না দিলে যে কোন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিভ্রান্তি।


জানা গেছে, গত দুই বছরের ফিন্যান্সিয়াল অডিট রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড সাসপেন্ড করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এমনকি ব্রোকারেজ হাউজটির ডিপি লাইসেন্সও নবায়নের অনুমতি দেয়নি শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এলিগেন্ট স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজের লাইসেন্স নবায়ন না করার জন্য ডিএসইকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডিএসই এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। ফলে গত কয়েকদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে শেয়ার লেনদেন বন্ধ রয়েছে।


এদিকে কয়েকজন বিনিয়োগকারী অর্থসংবাদকে বলেন, গত চার দিন আমরা শেয়ার লেনদেন করতে পারছি না। প্রতিদিন অফিসে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। তবে আমরা জিজ্ঞেস করলেও এখানকার কর্মকর্তারা আমাদের কিছুই বলছেন না। আমরা আমাদের বিও অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর (লিংক) করতে চাইলেও সেটি করতে পারছি না। গত রোববার থেকে আমরা এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। নাম গোপন রাখার শর্তে এলিগেন্ট স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে বলেন, আমরা ২০২০ এবং ২০২১ সালের অডিট রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় ডিএসই ট্রেড সাসপেন্ড করে দিয়েছে। ফলে গত কয়েকদিন এলিগেন্ট সিকিউরিটিজে শেয়ার লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা আমাদের কাগজপত্র ডিএসইতে জমা দিয়েছি, হয়তো আগামীকাল থেকেই লেনদেন শুরু করতে পারবো।


জানতে চাইলে লেনদেন বন্ধের বিষয়ে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাশেদ মোস্তফা। আজ (বুধবার) এলিগেন্ট সিকিউরিটিজে লেনদেন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অপরিচিত কারও সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমি অপরিচিত নাম্বারের ফোন রিসিভ করি না। তাই অপরিচিত কারও সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। আপনি আগামী সপ্তাহে অফিসে আসেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, এখন আমি যদি বলি আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাহলে সেটি কি সঠিক? এখন আপনি সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছেন, আমি কিভাবে বুঝবো আপনি সাংবাদিক। আপনি আগামী সপ্তাহে অফিসে আসেন, সরাসরি কথা বলবো। ফোনে এ বিষয়ে আপনাকে আমি কোন তথ্য দিতে পারবো না।


রাশেদ মোস্তফা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে না চাইলেও এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের ট্রেড সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে অর্থসংবাদকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার। তিনি অর্থসংবাদকে বলেন, যেসব ব্রোকারেজ হাউজ নিয়ম মানছে না সেগুলোর তো ট্রেড সাসপেন্ড করতে হবে। এলিগেন্ট সিকিউরিটিজের ডিপি লাইসেন্স নবায়ন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিএসইসি থেকে চিঠি দিয়ে তাদের লাইসেন্স নবায়ন না করতে বলা হয়েছে।


এদিকে লাইসেন্স নবায়ন না করার কারণ জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত দুই বছরের অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি এলিগেন্ট সিকিউরিটিজ। তারা অনেকবার সময় নিয়েছে, তবে রিপোর্ট জমা দেয়নি। এজন্য এ প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নবায়নের অনুমতি দেয়া হয়নি। কমিশন যখন বলেছে তখন আমাদের কিছু করার নাই।


জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম অর্থসংবাদকে বলেন, শর্ত পূরণ না করলে তো ব্রোকারেজ হাউজের লাইসেন্স নবায়নের অনুমতি দেওয়া হবে না। এখানে বিনিয়োগকারীদের টাকা আছে, তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি কমিশন দেখবে। কোনভাবেই যেন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন না হয় সেই বিবেচনা রেখেই কমিশন ব্যবস্থা নেবে।


জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোন ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেন বন্ধ থাকলে সেটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিৎ। এখানে বিনিয়োগকারীদের টাকা আছে, তাদেরকে ট্রেড সাসপেন্ড করার কারণ জানাতে হবে। আর কোন ব্রোকারেজের ট্রেড সাসপেন্ড করা হলে সেটি ডিএসইর জানানো উচিৎ।


তিনি বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসইর নির্দিষ্ট সময় পর পর তদন্ত করা উচিৎ। আর বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজ বাছাই করা প্রয়োজন। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অনিয়ম বেশি হয়ে থাকে। ব্যাংক, বিমা বা ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউজগুলো তুলনামূলক নিরাপদ।


যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেখ শফিউল ইসলাম মনে করেন, যে কোন প্রতিষ্ঠানের উচিৎ ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। তিনি বলেন, তথ্য না দিলে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। একজন মানুষ যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে, সে প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য না পেলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে এক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।


প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তামহা সিকিউরিটিজ নিজ থেকেই শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন স্থগিত করে। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বিএসইসি অনুরোধে তামহা সিকিউরিটিজের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স।


এছাড়াও বানকো সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীদের ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে ৬৬ কোটি টাকা ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় ২০২১ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন স্থগিত করা হয়। একই ধরণের সমস্যার কারণে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজেরও ট্রেড সাসপেন্ড রয়েছে। ফলে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কারণে অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত