শীতের ঋতু পৌষ শুরু হতেই দ্রুত নামছে তাপমাত্রার পারদ। হিমেল বাতাস আর কুয়াশার দেশের উত্তরের জেলাগুলোর জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করছে। দুর্ভোগের আবর্তে পতিত হয়েছেন ছিন্নমূল ও কায়িক শ্রমিকরা। শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শুক্রবার থেকে তিন বিভাগের অন্তত ছয়টি জেলায় এ শৈত্যপ্রবাহ ঘিরে নেওয়ার পর রাজধানীতেও ক্রমশ শীতার্ত প্রভাব পড়ছে। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও ঢাকা বিভাগে তাপমাত্রা কমেছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, অব্যাহত থাকবে শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি নেমে গেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে এবং তা এ বছরের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল শনিবার রাজশাহী বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনা বিভাগে ৯.৩, বরিশাল বিভাগে ১২.৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩.৩, রংপুর বিভাগে ১০.৯, সিলেট বিভাগে ১৫.৪ ও ঢাকা বিভাগে ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দুই দিন আগে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ ইউরোপিয়ান স্যাটেলাইটের আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, আগামী ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ জেলার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সব জেলার তাপমাত্রা ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময় ঢাকা শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে তা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।
আবহাওয়াবিদরা জানান, গত কয়েক দিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ায় দিনের কয়েক ঘণ্টা সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা পাচ্ছে। দিনের একটি বিশেষ সময় ঠিকমতো গরম হতে না পারায় ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। এ সময়ে উপমহাদেশের উচ্চ চাপ বলয়ের একটি অংশ ভারতের বিহার রাজ্যের কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। এর একটি প্রভাব বাংলাদেশে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে পড়েছে। এছাড়া ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বাকাশে জেট স্ট্রিমের প্রবাহও অপেক্ষাকৃত নিচে নামতে শুরু করেছে । এছাড়া ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর দক্ষিণ থেকে অপেক্ষাকৃত আর্দ্র বায়ু বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হতো, তা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ঠান্ডা পড়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সকালে কাজে বের হতে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ জন । ঠান্ডা বাড়ায় কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতের পোশাক কেনার চাহিদাও বেড়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি না থাকায় এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় কিছু ফসলের ক্ষতি হতে পারে। যেমন শীতে আলু গাছে পাতা শুকিয়ে যেতে পারে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায়। অন্যদিকে বোরো ধানের বীজতলাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীত আসলেই ঠান্ডাজনিত কারণে কাশি, জ্বর, হাঁপানি হতে পারে । এমনকি ঠান্ডা থেকে অনেকের নিউমোনিয়াও হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ সময় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন ।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি রুবাইত-বিন-আজাদ জানান, তিন দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে দুদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাওয়া গিয়েছিল এখানে। হিমেল বাতাস থাকায় এখানে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে ও সন্ধ্যায় থাকছে তীব্র শীত। এছাড়া সারাদিনই শীত। শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে । কুয়াশা ঢাকা প্রান্তরে সূর্যের দেখা প্রায় মিলছেই না । এর মধ্যেই শ্রমজীবী মানুষকে কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে । তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ । তীব্র শীত অব্যাহত থাকলে বীজতলা ও মৌসুমি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক।
অর্থসংবাদ/কেএ