বাংলাদেশ ও মোজাম্বিকের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করতে চায় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। বাংলাদেশ এবং মোজাম্বিক উভয়ই ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে এবং এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব থেকে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে।
বাংলাদেশে সফররত আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় এই মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বৃহৎ অবদানের কারণে বাংলাদেশ সেখানে দারুণ সুপরিচিতি। তবে এর বাইরেও এখন আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক ব্লকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ মোজাম্বিকে প্রধানত ফার্মাসিউটিক্যালস, রাবার এবং আরএমজি পণ্য রপ্তানি করে। অপরদিকে সেদেশ থেকে প্রধান আমদানি পণ্য হল তুলা।
পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, হিমায়িত সামুদ্রিক খাবার, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, আইসিটি, এফএমসিজি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারিদের মোজাম্বিকে এসব খাতের কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ অনুসন্ধানের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সেখানের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার ব্যাপারেও পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
আলোচনাসভায় দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে দুই দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থার মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
এসময় মোজাম্বিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক জোসে মাতসিনহা। তিনি বলেন, মোজাম্বিক ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাময় যেসব খাতে দুই দেশ যাতে কাজ করতে পারে সেগুলো অনুসন্ধানেই আমরা বাংলাদেশে এসেছি। আমরা পারস্পরিক স্বার্থে, কৌশলগত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা পেতে পারি। মোজাম্বিকে প্রচুর পরিমাণে জমি এবং পানি রয়েছে। তবে আমাদের দক্ষতারও অভাব রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি খাতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। তিনি মোজাম্বিকে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আইটি, নির্মাণ খাত ইত্যাদিসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোর সুযোগ কাজে লাগাতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠন করা দরকার বলে জানান আফ্রিকা মহাপরিচালক মোঃ তরিকুল ইসলাম। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
এফিবিসিসিআইর সহ-সভাপতি এম মোমেন জানান, বিদেশ থেকে নিজেদের উদ্যোগে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তাই মোজাম্বিক থেকে গ্যাস আমদানিসহ কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ইত্যাদি খাতে দুদেশের বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা করেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে ভারতে নিযুক্ত মোজাম্বিকের হাইকমিশনার এরমিন্দো ফেরেইরা, অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জোসে ফার্নান্দো মেসিয়াস, এফবিসিসিআইর পরিচালক হাসিনা নেওয়াজ, এমজিআর নাসির মজুমদার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হাফেজ হারুন, এসএম শাফিউজ্জামান, মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি, আক্কাস মাহমুদ, এফবিসিসিআই মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।