বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের গণপরিবহনে যুক্ত হতে যাচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক বৈদ্যুতিক ট্রেন মেট্রোরেল। যা ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড- ডিএমটিসিএল'র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে তৈরি করা মেট্রোরেলে যাত্রীদের জন্য নানা সুবিধা থাকবে। থাকবে নারী, শিশু এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা।
মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুইটি কোচকে বলা হয় ট্রেইলর কার। এতে থাকবেন চালক। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার।
সেখানে বসতে পারবেন ৫৪ জন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। সাড়ে নয় ফুট চওড়া কোচগুলোর মাঝে দাঁড়িয়েও যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারবেন।
ট্রেনের কোচগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে স্টেশনে থামার পর মেঝে একেবারে প্ল্যাটফর্মের সমতলে থাকে। এতে যাত্রীরা সহজেই হেঁটে ট্রেনে উঠতে পারবেন। কোচের দুই পাশে দুইটি দরজা।
পুরোদমে চালুর পর ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলা মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। আর এক দিনে পরিবহন করতে পারবে ৫ লাখ যাত্রী।
ছয়টি কোচ সংবলিত প্রতিটি একমুখী মেট্রোরেল প্রতিবারে মাত্র ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬ স্টেশন থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
মেট্রোতে নারী যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা শুধু নারীদের জন্যই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাইলে নারীরা অন্য যেকোনো কোচেই যাতায়াত করতে পারবেন।
এছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাতে ছোট শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সুবিধার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজিত রয়েছে।
গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক নারী যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলের কোচের ভেতরে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। আলাদা আসন থাকছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যও।
এছাড়া রাস্তা থেকে স্টেশনে প্রবেশ, টিকিট সংগ্রহ, সিঁড়ি ব্যবহার করে প্লাটফর্মে পৌঁছানো পর্যন্ত আলাদা ব্যবস্থা হিসেবে লিফট রাখা হয়েছে। ট্রেন শুধু বিদ্যুতের গতিতে শুধু চলবে না, তার আনুষঙ্গিক সবই প্রায় প্রযুক্তি নির্ভর।
প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথ যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পরদিন মেট্রোরেল যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। প্রথম দিকে সকাল ও বিকালে মোট চার ঘণ্টা করে যাত্রী পরিবহন করবে মেট্রোরেল। এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, মেট্রোরেল আমাদের দেশের মানুষের কাছে একেবারেই নতুন একটা পরিবহন।
মানুষ মেট্রোতে এতো দ্রুত অভ্যস্ত হতে পারবে না বলেই সময় ও ট্রিপ কম করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের ট্রিপ ও গতি বাড়বে।
মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বর্তমানে মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাও পর্যন্ত চালু হচ্ছে। এ অংশের ভাড়া হবে ৬০ টাকা, সময় লাগবে ২০ মিনিট।
অর্থসংবাদ/কেএ