এছাড়া কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি কার্যক্রম বেগবান করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, রফতানি খাতের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিতকল্পে সহজ শর্তে একটি রফতানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল গঠন করা হলো।
তহবিলের নাম: রফতানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল।
তহবিলের পরিমাণ ও উৎস: ১০ হাজার কোটি টাকা; বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল।
খাত: স্থানীয় রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি/স্থানীয় সংগ্রহের বিপরীতে আলোচ্য তহবিল থেকে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
অংশগ্রহণকারী ব্যাংক: বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক উক্ত প্রাক-অর্থায়ন তহবিল হতে ঋণ সুবিধা গ্রহণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
তহবিল ব্যবস্থাপনা: তহবিলের সামগ্রিক তদারকি/পরিচালনা/ব্যবস্থাপনার কাজ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় সম্পাদন করবে।
তহবিলের মেয়াদ: আবর্তনযোগ্য এই তহবিলের কার্যক্রম পুনর্নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা-
ক) যেকোনও প্রত্যক্ষ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এবং প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকের অনুকূলে অর্থায়নের জন্য এ তহবিল উন্মুক্ত থাকবে।
খ) এ তহবিলের অর্থ রফতানিকারকের ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যবহার করা যাবে। ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদনকারী-সরবরাহকারী কাঁচামাল আমদানির জন্যও ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
গ) কোনও খেলাপি গ্রাহক বা গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে এ তহবিলের আওতায় ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না।
ঘ) এ তহবিল হতে ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী কোনও গ্রাহক ওই নির্ধারিত রফতানির বিপরীতে রফতানিমূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকলে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক এ তহবিলের আওতায় নতুনভাবে আর কোনও ঋণ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে উক্ত রফতানিমূল্য যথাসময়ে প্রত্যাবাসিত না হলে আরও একবার সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা নতুন ঋণসুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। নতুন ঋণ সুবিধা গ্রহণের আগে ইতোপূর্বে ইস্যু করা ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে সৃষ্ট দায়ের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ গ্রাহককে নগদে পরিশোধ করতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সন্তোষজনক প্রতীয়মান হতে হবে।
ঙ) গ্রাহক রফতানি ঋণপত্রের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কোনও তহবিল হতে সুবিধাপ্রাপ্ত হলে এই তহবিলের আওতায় কোনও ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না।
গ্রাহক পর্যায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ-
ক) গ্রাহক পর্যায়ে সুদ/মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ।
খ) বাংলাদেশ ব্যাংক জারিকৃত শিডিউল অব চার্জেস সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালায় বর্ণিত চার্জ/ফি ব্যতিরেকে গ্রাহকের কাছে থেকে অন্য কোনও ধরনের চার্জ বা ফি আদায় করা যাবে না।
ব্যাংক পর্যায়ে সুদ/মুনাফা হার: বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ব্যাংকগুলোর গৃহীত প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের বিপরীতে ১.৫ শতাংশ হারে সুদ/মুনাফা প্রদান করতে হবে।
ঋণের পরিমাণ-
ক) চূড়ান্ত রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), সুতা উৎপাদনকারী বিটিএমএ’র সদস্য মিল ব্যতীত বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সদস্য এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত টাইপ-বি ও টাইপ-সি প্রতিষ্ঠানগুলো (বাল্ক পদ্ধতিতে আমদানিকারক সদস্য মিল ব্যতীত) কর্তৃক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য রফতানি ঋণপত্র/নিশ্চিত রফতানি চুক্তির বিপরীতে আইপিওতে উল্লিখিত মূল্য সংযোজনের মাত্রা পরিপালন সাপেক্ষে অর্থায়নকারী ব্যাংক বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় তথ্য/দলিল দাখিল সাপেক্ষে উৎপাদনের কাঁচামাল মূল্যের সমপরিমাণ, অথবা ২০০ কোটি টাকা (যেটি কম) এ তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক হতে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
খ) অভ্যন্তরীণ ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের আওতায় রফতানি তথা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারী-রফতানিকারকদের কাছে সুতা/বস্ত্র সরবরাহের নিমিত্ত বিটিএমএ-এর সদস্য মিলের জন্য তুলা ও অন্যান্য তন্তু আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিগত ১২ মাসে অভ্যন্তরীণ ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত সরবরাহ মূল্যের বিপরীতে যে ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করা হয়েছে, সেই ঋণের সমপরিমাণ প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে, কোনও অবস্থাতেই ২০০ কোটি টাকার অধিক এ সুবিধা প্রদান করা হবে না।
অর্থসংবাদ/কেএ