একান্নতে এসেও খোঁড়াচ্ছে বিমান

একান্নতে এসেও খোঁড়াচ্ছে বিমান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠা হয় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল দেশের একমাত্র আকাশ পরিবহন সংস্থা।

এমিরেটস, কাতার এয়ার, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস ও সিঙ্গাপুর এয়ার- সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এসব প্রতিষ্ঠানের যাত্রাও প্রায় একই সময়ে। গত ৫১ বছরে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে কয়েক গুণ, যার ধারেকাছেও নেই বিমান। আর এই সুদীর্ঘ সময়েও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি যেন খুঁড়িয়ে চলছে। নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি দেশের আকাশপথের।

বর্তমানে বিমানের বহরে রয়েছে ২১টি উড়োজাহাজ, যার মধ্যে ১৮টিই নিজস্ব। এই উড়োজাহাজগুলোর প্রতিটিই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। বহরে এগুলো যুক্ত হয়েছে গত ১৪ বছরে। বলা হয়, বিমানের এই বহরটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নবীন ও অত্যাধুনিক বহর।

নবীন বহর থাকার পরও দেশি বাজারের সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিমানের কাছে। দেশে বর্তমানে ৩০টিরও বেশি বিদেশি এয়ারলাইনস সক্রিয়। দেশের এভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করে এসব এয়ারলাইনস। এর মধ্যে রয়েছে এমিরেটস, কাতার এয়ার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, এয়ার এশিয়া, মালয়েশিয়ান এয়ার, টার্কিশ এয়ার ইত্যাদি।

অবশ্য এই নবীন বহরের ওপর ভর করেই ভবিষ্যতে এশিয়ার শীর্ষ তিন এয়ারলাইনসের একটি হতে চায় বিমান।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ভিশন আছে এশিয়ার টপ টেন এয়ারলাইনসে যাওয়ার। পরবর্তী সময়ে আমরা টপ থ্রিতে যাব। সে লক্ষ্যে আমাদের যে কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের বহর বাড়ছে। যেখানে দরকার সেখানে দক্ষ পাইলট নিয়োগ, কেবিন ক্রুদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সব সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে নিচ্ছি।

‘গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রীর নিজের চিন্তার প্রতিফলন অনুবাদ করতে যাচ্ছি। এর জন্য দরকার বিমানের আধুনিকায়ন। একই সঙ্গে পরিচালনায় যারা আছে তাদের মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। জনগণের টাকায় কেনা…, এই বিপুল অর্থ যে আমরা বিনিয়োগ করছি সেটির প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। এটা প্রত্যেকের দায়িত্ব।’

বর্তমানে ৪০টির বেশি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট বা ফ্লাইট চলাচল চুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ এ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ সরাসরি আকাশপথে যুক্ত হতে পারে। তবে সে সুযোগ এখনও কাজে লাগাতে পারেনি বিমান। বর্তমানে ২০টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে রয়েছে বিমানের ফ্লাইট।

সরকারের এভিয়েশনবান্ধব নীতি না থাকা এই ব্যর্থতার কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘মার্কেট ডমিনেশনের মূল কাজটি করে থাকে ন্যাশনাল ক্যারিয়ার। আমাদের এখানে এক সময় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাজার বিমান একা নিয়ন্ত্রণ করত। সেই বাজার কমতে কমতে বিশের নিচে নেমে এসেছে। এই সময়টাতে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনস বেড়েছে, তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও বেড়েছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো যেভাবে এগিয়েছে বিমান সেভাবে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘দেশি এয়ারলাইনসকে এগিয়ে নিতে যে ধরনের নীতি-সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজন তা নেই। ফুয়েলের দাম, ট্যাক্স স্ট্রাকচার, সারচার্জ নেই। ফলে স্থানীয় এয়ারলাইনসগুলো সুবিধা করতে পারছে না। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা। এখানে এভিয়েশন ফ্রেন্ডলি পলিসি না হওয়াটা একটি বড় কারণ। এগুলো পেরিয়ে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর এগিয়ে যাওয়া কঠিন। সরকার সহযোগিতা না করলে এরা বেশিদূর যেতে পারবে না।’

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবশ্য আশাবাদী। শফিউল আজিম বলেন, ‘নারিতা, চেন্নাই ও মালেতে ফ্লাইট শুরুর বিষয়ে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। আশা করছি হজ অপারেশনের পরপরই আমরা নারিতায় ফ্লাইট শুরু করতে পারব। টরন্টোতে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। এখানে ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধির জন্য আমাদের কাছে ডিমান্ড আছে।

‘বিমানের লন্ডন ও ম্যানচেস্টার ফ্লাইট আমরা মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের ফিডব্যাক নিয়ে প্রয়োজনে রি-অ্যারেঞ্জ করব। যেখানে আমাদের ঘাটতি আছে সেখানে সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করছি।

‘২০টি আন্তর্জাতিক রুটে আমরা যাচ্ছি। প্রবাসীদের টার্গেট করে আমরা আমাদের মার্কেট এক্সপানশনের চেষ্টা করছি। সামনের দিনগুলোতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে আমরা কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে।’

শফিউল আজিম দাবি করেন, লোকসানের চক্র থেকে বেরিয়ে আসছে বিমান। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি এ বছর ৪৩৬ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। বিমান জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের প্রতি বিমানের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা শুধু ব্যবসা পরিচালনা করি না। যাত্রীরা যাতে উন্নত সেবায় সর্বনিম্ন খরচে ভ্রমণ করতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করে থাকি।’

সরকারের রূপকল্পের সঙ্গে অ্যালাইন করে ২০৩০ সালের মধ্যে বিমানকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিমানের এমডি। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হবে। বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হবে। কার্গো সার্ভিস উন্নত হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আধুনিক বিমানবন্দরের মতো নিতে কর্মপরিকল্পনা নেব।’

বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলোর সক্ষমতা ব্যবহারও বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের উড়োজাহাজের ইউটিলাইজেশন হলো এখন ১৪ ঘণ্টা। স্ট্যান্ডার্ডের উপরে আছি। বড় উড়োজাহাজগুলোর অপটিমাম ইউটিলাইজেশন আমরা এখন করছি। পাইলট রিক্রুটমেন্টের কাজ শেষ করেছি। আন্ডার ইউটিলাইজ থাকার সুযোগ নেই। কোনো কারনে কোনো পাইলট কাজ করতে না পারেন এখন পর্যাপ্ত পাইলট আমাদের হাতে থাকবে।

‘হজকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আসন্ন হজ মৌসুম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা এখন থেকেই কাজ শুরু করেছি। নিজস্ব বহরের উড়োজাহাজ দিয়েই আমরা হজ অপারেশন করব। কোনো লিজে আমরা যাব না। সে অনুযায়ী আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছি।’

অর্থসংবাদ/কেএ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু